Friday 26 January 2018

স্বার্থপর আমরা,, সার্থপর এই পৃথিবী, বড্ড বেশিই স্বার্থপর...!! .

১/
--আরশ,, আজকে দুপুরের দিকে যেভাবেই হোক একটু দেখা করো প্লিজ,, অনেক কথা বলার আছে তোমাকে...!! (নিহা)
--আজকে?? আজকে থাক নিহা,, আমরা আগামিকাল দেখা করি?? আজকে আমাদের বাসায় অনেক মেহমান আসছে, আমি একদম ফ্রি না আজকে...!! (আরশ)
--আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা আরশ,, আমি দুপুর ২টায় তোমার জন্য গোলাপগঞ্জ অপেক্ষা করবো... তুমি যদি না আসো, তাহলে কসম আমি আর জীবনেও তোমার সাথে কথা বলবনা...!!!
কথাটা বলেই নিহা ফোন কেটে দেয়,, ফোন কেটে দিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে নিহা,, নিহা জানে, এখন যা কিছুই হয়ে যাক, আরশ নিশ্চই দেখা করতে আসবে...!!
.
২/
বাবা করিম, আমার তো ঔষধ শেষ হইয়া গেছে,, আইজকা দুপুরে রিক্সাটা রাইখা একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরিয়া আসিস বাজান, আমার শরীরটা বেশি ভালোনা...!! (কাশতে কাশতে কথাটা বলেন রিক্সা চালক করিম চাচার মা)
--ঠিক আছে মা, আমি দুপুরে রিক্সা রাইখা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরমু,, আর তোমার ঔষধ ও নিয়া আসমু... তুমি চিন্তা করিওনা...!!
.
৩/
--এইযে ডক্টর শামিম সাহেব,, আজকে আমাদের একমাত্র ছেলের প্রথম জন্মদিন, আপনার কি সেটা মনে আছে..?? (মিসেস শামিম)...!
--হুম হুম, আজকের দিনটা কি করে ভুলে যাই বলো? (ডাঃ শামিম)
--আজকে দুপুরে সব মেহমানদের দাওয়াত দিছি... প্রত্যেকটা দিন তুমি দেরি করে আসো,, আমি কিছুই বলিনা তোমায়, কোনোদিন কিছু বলবোও না,, কিন্তু দয়া করে প্লিজ আজকের দিনটা এরকম করিওনা... আমার ছেলেটার প্রতি অবিচার করিওনা,, মেহমানদের সামনে আমাকে অপমান করিওনা প্লিজ... আমরা দুপুর ২টায় কেক নিয়ে সবাই অপেক্ষা করবো,, প্লিজ দয়া করে আজকে একটু তাড়াতাড়ি চলে এসো...!!
--আজকের দিনে তোমাকে রিকুয়েস্ট করতে হবেনা বউ,, কথা দিলাম যা কিছুই হোক, দুপুরের আগে আজকে ঠিক বাসায় চলে আসবো... আমার ছেলের সাথে একসাথেই কেক কাটবো,, দেখে নিও...!!
স্বামির মুখে কথাটা শুনে ঠোটঁ ভাঁজ করে হাসতে থাকেন মিসেস শামিম... এখন তার বাসাটা সাজাঁতে হবে, অনেক কাজ এখনো বাকি রয়ে গেছে...!!!
.
""""দুপুর ১:৫০ মিনিট""""
.
প্রচন্ড গরমের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিক্সা খুজঁছে আরশ,, এই গরম দুপুরে রিক্সা পাওয়া অনেক কষ্টকর... নিহা হয়তো এতোক্ষনে পৌছে গিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে,, নিহার সাথে দেখা করে তাড়াতাড়ি আবার তাকে বাসায় ফিরতে হবে,, বাসায় আজকে অনেক মেহমান...!!!
হুট করে আরশ খেয়াল করলো তার সামনে দিয়ে একজন রিক্সা চালক হাতে মেডিসিনের ব্যাগ নিয়ে অনেক জোরে জোরে রিক্সা চালিয়ে যাচ্ছেন...!!
--এইযে চাচা,, চাচায়ায়ায়ায়ায়া একটু দাড়ান...!! (অনেক জোরে চিৎকার করে বললো আরশ)
আরশের ডাক শুনে রিক্সা থামান করিম নামের এক রিক্সাচালক...!!
--চাচা,, গোলাপগঞ্জ যাবেন?
--না বাজান...!!
--চাচা চলেন না প্লিজ, আমার অনেক তাড়া আছে,, এখন তো আর রিক্সাও খুজেঁ পাবোনা...!!
--আমার ও অনেক তাড়া আছে বাজান,, আমার মা আমার জন্য বাড়িতে অপেক্ষা করতাছেন,, এই দেখো ঔষধের ব্যাগ,, আমি গিয়ে আমার মা'কে ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে...!!
--টাকা ডাবল দিবো চাচা,, আপনি আমাকে নামিয়ে দিয়েই আবার তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাবেন,, দেরি হবেনা চাচা... চলেন না প্লিজ...!!
আরশের কথা শুনে করিম চাচা একবার মেডিসিনের ব্যাগের দিকে তাকালেন,, মায়ের অবস্থা বেশি ভালোনা,, আজকের দিনে আর রিক্সা না চালিয়ে মায়ের পাশেই থাকতে হবে তার,, বাড়ি যাবার আগে কিছু টাকা পকেটে করে নিয়ে গেলে খুব একটা খারাপ হয়না..!!
--চাচা কি এতো চিন্তা করেন? টাকা ডাবল দিবো'তো... চলেন প্লিজ..!!
--ঠিক আছে বাজান, উঠো...!!
.
এই মুহৃর্তে অনেক জোরে জোরে রিক্সা চালাচ্ছেন করিম চাচা,, তার শরীরটা রিক্সায় থাকলেও মনটা পুরো মায়ের কাছে বাড়িতে পড়ে আছে,, তাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে...!!
--চাচা, রিক্সা একটু আস্তে চালান,, এতো জোরে চালানোর কিছু নাই...!!
আরশের কথা শুনে পিছন ফিরে আরশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে করিম চাচা বললেন-
--তোমার ও তাড়া আছে বাজান,, আমার ও অনেক তাড়া... তাই একটু জোরে চালাচ্ছি...!!
--চাচায়ায়ায়ায়া সামনে বাআআআসসস...
করিম চাচা সামনের দিকে তাকানোর আগেই আশে পাশের মানুষেরা শুনতে পেলো ভয়ংকর একটা শব্দ...!!
.
এই মুহৃর্তে করিম চাচার রক্তে ভেজা শরীরটা পড়ে আছে রাস্তার পাশে,, তার শরীরের পাশেই পড়ে আছে একটা মেডিসিনের ব্যাগ... একদল মানুষ তাড়াতাড়ি করিম চাচার শরীরের পাশে দৌড়ে গেলো, কিছু মানুষ করিম চাচার শরীর চেক করে বললো "ইশশশ মারা গেলো মানুষটা"...!!
করিম চাচার লাশ থেকে আরেকটু দূরে পড়ে আছে আরশ নামের একটা যুবকের শরীর... কিছু মানুষ তাড়াতাড়ি আরশের শরীরের পাশে গিয়ে চেক করে বললো "ছেলেটা বেঁচে আছে এখনো,, ওরে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিতে হবে... তাড়াতাড়ি একটা সিএনজি নিয়ে ২-৩জন লোক আরশের শরীরটা নিয়ে গেলো হসপিটালে...!!
.
""দুপুর ২:১৫ মিনিট""
.
এই মুহৃর্তে নিজের গাড়িতে বসে আছেন ডাঃ শামিম,, যখন বাসার উদ্দেশ্যে গাড়িটা স্টার্ট দিতে যাবেন ঠিক তখন-ই ডাঃ শামিমের ফোনটা বেজেঁ উঠলো...!!
--হ্যালো ডাঃ শামিম? আমাদের হসপিটালে এইমাত্র আরশ নামের একটা যুবক ভর্তি করা হয়েছে,, মাথার অবস্থা খুব সিরিয়াস,, এখন-ই অপারেশন করতে হবে, বড় স্যার বলছেন ছেলেটা ওনার বন্ধু মিস্টার মেহরাবের,, হসপিটালের সিনিয়র ডক্টর হওয়ার ফলে অপারেশনটা আপনাকেই করতে হবে,, স্যার আরো বলেছেন যে করেই হোক তিনি ছেলেটাকে সুস্থ দেখতে চান... আপনি তাড়াতাড়ি আসুন...!!
--ঠিক আছে, আমি আসছি...!!
ফোনটা রেখে উপরের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন ডাঃ শামিম... গাড়ি থেকে নেমে হসপিটালের দিকে হাটঁতে থাকেন তিনি... ছেলের ১ম জন্মদিনের চাইতে কারো জীবন বাচাঁনো তার কাছে অনেক বেশিই বড়...!!
.
এই মুহৃর্তে আরশের জন্য অপেক্ষা করছে নিহা...!! বিছানায় শুয়ে কাশতে কাশতে করিম চাচার জন্য অপেক্ষা করছেন ওনার মা...!!
অনেক মেহমানকে নিয়ে কেকের সামনে দাঁড়িয়ে ডাঃ শামিমের জন্য অপেক্ষা করছেন ওনার স্ত্রী...!!
.
দুপুর ২টা থেকে ৩টা... ৪টা... ৫টা বেজেঁ গেছে... এখনো দাঁড়িয়ে আছে নিহা, অনেকবার আরশকে ফোন দিচ্ছে সে, কিন্তু নাম্বার সুইচ অফ,, রাগ করে কাদঁতে কাদঁতে একটা রিক্সা ডেকে বাসায় চলে যায় সে,, নিজের মোবাইল ও সুইচ অফ করে দেয় নিহা... সামনের কয়েকটা দিন সে আর মোবাইল অন করবেনা...!!
.
মেহমানরা ডাঃ শামিমের জন্য অপেক্ষা করতে করতে চলে যান,, যাবার সময় অনেকগুলো কথা শুনিয়ে যান মিসেস শামিমকে, "কিরকম ছেলের বাবা ওনি? যে ছেলের ১ম জন্মদিনে ছেলেকে সময় দিতে পারেন না,, কিরকম স্বামি ওনি? যে তোমাকে কোনো গুরুত্ব দেয়না"... মেহমানরা চলে যাওয়ার পর কাদঁতে কাদঁতে নিজের ব্যাগ ঠিক করে ডাঃ শামিমের জীবন থেকে বাবার বাসায় চলে যান মিসেস শামিম... কি প্রয়োজন এরকম মানুষের জীবনে থাকার?? যে নিজের বউ-সন্তানকে সময় দেয়না, গুরুত্ব দেয়না...!!!
.
বিছানায় কাশতে কাশতে পানি পানি বলে যাচ্ছিলেন করিম চাচার মা,, ওনাকে পানি দেওয়ার মতো কেউ পাশে নেই এখন,, অনেকটা কষ্টে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে পৃথীবির মায়া ছেড়ে চলে যান রিক্সা চালক করিম চাচার মা...!!
.
আমরা অপেক্ষা করি, হয়তো অপেক্ষা করতে করতে একদিন নিহার মতো রাগ করে চলে যাই,, অথবা মিসেস শামিমের মতো রাগ করে তার জীবন থেকে চলে যাই,, কিংবা করিম চাচার মায়ের মতো অপেক্ষা করতে করতে একদিন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবো...!
আমরা শুধুই অপেক্ষা করি,, শুধুই অপেক্ষা... আমরা জানতে চাইনা মানুষটা কেনো আসছেনা... আমরা বুঝতে চাইনা মানুষটা কেনো আসলোনা... আমরা শুধু এটা জানি, আমরা কষ্ট পাইছি,,, আমরা কষ্ট পাচ্ছি... স্বার্থপর আমরা,, সার্থপর এই পৃথিবী, বড্ড বেশিই স্বার্থপর...!!
.
লেখক→ Mehrab Noyon (আরশের পাপা)

No comments:

Post a Comment