Monday 29 January 2018

গল্প: মিতুর সাথে দেখা

গল্প: মিতুর সাথে দেখা
.
.
সার্কিট হাউস পার্কের লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে একা একা হাঁটছি। দীর্ঘ ৩০মিনিট হাঁটার পর একটা মজার জিনিস খেয়াল করলাম। আমার ডান পাশের প্রত্যেকটা বেঞ্চিতে একটা করে কাপল বসে আছে। তারা খুব আমোদে গল্প করছে। কিন্তু একটা বেঞ্চ খালি। বেঞ্চটা ভীষণ নিঃসঙ্গতা অনুভব করছে। সেও চাচ্ছে তার উপরে কেউ বসুক। কেউ একজন বাদামের সাথে এক চিমটি লবন জিবে দিয়ে ঠোঁট ভাজ করতে করতে গল্প করুক। আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখছি বেঞ্চটার নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্য কোনো সঙ্গী পাই কিনা। কাউকে পেলাম না। এমন সময় অল্পবয়সী একটা ছেলে ফ্লাক্স হাতে এসে বললো, স্যার চা দিব?
কেউ স্যার বললে আমার বিব্রত লাগে। একুশ কিংবা বাইশ বৎসর বয়সী একটা ছেলেকে স্যার বলার কিছু নেই। তাদের বিনয়ের সাথে ভাইয়া বললেই বেশী খুশি হবে।
আমি বললাম, "দাও এক কাপ চা দাও। লিগার কড়া করে দিবে।" ছেলেটা চা দিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ফ্লাক্স খালি হয়ে গেছে?
- হু। সব বেচে ফেলছি।
- তাইলে চলো ঐ বেঞ্চিটাতে গিয়ে বসি।
ছেলেটা আমার কথা শুনে মোটামুটি হকচকিয়ে গেছে। তার হতচকিত ভাব দূর হতে বেশী সময় লাগলো না। সাথে সাথে আমি বললাম, যাও ৫টাকার বাদাম কিনে নিয়ে এসো। সে আমার কথামতো বাদাম কিনে নিয়ে আসলো। দুজন বসে যখন বাদাম খাচ্ছি তখন পাশের বেঞ্চগুলার কাপলরা খুব আগ্রহ নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমাদের দেখে তারা খুব মজা পাচ্ছে।
বাদাম খাওয়া শেষ না হতেই আশরাফুলের ফোন। আমি কল রিসিভ করতেই সে বলে উঠলো, রেলক্রসিংয়ে আসো। আমি ‘আচ্ছা’ বলে ফোন কেটে দিলাম। কারণ রেলক্রসিংয়ে কি দরকার তা আমি জানি, সেখানে এক অল্পবয়সী ছেলে আর এক মধ্যবয়সী লোক খুব ভালো দুধ চা বানায়। সে আমার হাতে চা ধরিয়ে দিয়ে চার তলার জানালার দিকে তাকিয়ে থাকবে। আর জানালার ওপাশ থেকে কেউ একজন রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে তার সাথে কথা বলবে। দুজনের কানেই থাকবে হেডফোন আর চোখে চোখ। এই দৃশ্যটা আমি খুব আগ্রহ নিয়ে দেখি। একবার আশরাফুলের দিকে তাকাই আরেকবার জানালার ওপাশে থাকা তরুণীর দিকে। মেয়েটার নাম বলতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু বলা যাবে না। কিছু কিছু চরিত্র সবসময় গল্পের আড়ালে থাকতে চায়। তাদেরকে আড়ালেই থাকতে দেওয়া উচিত।
.
বাদাম শেষ করে চা ওয়ালা ছেলেটি ফ্লাক্স হাতে নিয়ে বললো, ভাইয়া যাই।
কিছুক্ষণ আগে ছেলেটি আমাকে স্যার বলে ডাকছিলো। এখন হঠাৎ ভাইয়া। ছেলেটি কি মন পড়তে পারে? পারার কথা না। হয়তো একটু আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের কারণে ভাইয়া ডাকার অধিকার পেয়ে গেছে। কি অদ্ভুত বিষয়, অধিকার জিনিসটা মানুষ হুট করেই পেয়ে যায়। আপনি কাউকে ভালোবাসলে সেই মানুষটার অনুমতি ছাড়াই আপনি তাকে আপন ভাবতে শুরু করবেন। তখন মনে মনে একটা সম্পর্কও তৈরী হয়ে যাবে।
চা ওয়ালা ছেলেটা চলে যাচ্ছে এমন সময় আমি ডাক দিয়ে বললাম, - কিরে চায়ের দাম নিবি না?
- আমি শেষ চায়ের দাম নিই না। বলেই ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি নিয়ে ছেলেটি প্রস্থান করলো। আমি হাঁটতে হাঁটতে সানকিপাড়া রেলক্রসিংয়ের দিকে গেলাম। দেখি আশরাফুলের সাথে দুটি মেয়ে রেললাইন ধরে হেঁটে যাচ্ছে। আমি পিছন দিক থেকে মেয়ে দুটিকে ঠিক চিনতে পারছি না। তবে একটি যে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা "কেউ একজন" তা নিশ্চিত। এই "কেউ একজনের" একটা নাম রাখা উচিত। আচ্ছা মিমু নামে সম্বোধন করলে কেমন হয়? আমার পরিচিত একটি মেয়ে আছে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টে পড়ে। তার ধারণা আমি দোয়া করে দিয়েছিলাম বলে সে চান্স পেয়েছে। নাহলে পেত না। আমারও তাই ধারণা।
যাইহোক আমি পিছন থেকে তাদের ডাক না দিয়ে দ্রুতবেগে হেঁটে কাছে গেলাম। ঠিক পিছনে গিয়ে বললাম, মিমু কেমন আছো? মেয়েটা আমার কথা শুনে চমকে গেছে। আশরাফুলের মুখে হাসি। এই ছেলেটাকে হাসলে যে কি সুন্দর লাগে তা বলে বুঝানো যাবে না। আমি নিশ্চিত যেকোনো মেয়ে তার হাসি দেখে প্রেমে পড়ে যাবে তারপর আস্তে আস্তে নিজেকে কনট্রোল করবে। কারণ এতো সুন্দর হাসির কোনো ছেলে সিঙ্গেল থাকে না। আশরাফুলও নেই। তার মিমু আছে।
মিমু আমার দিকে ফিরে বললো,
- ওহ তাহসিন ভাই?! কেমন আছেন আপনি? আর আমাকে এভাবে চমকে না দিলেও পারতেন। চমকে দেওয়া আমি পছন্দ করি না। আমি মনে মনে বললাম, তোমার পছন্দ অপছন্দ হিসেব করবে আমার বন্ধু। আমি না। মানুষ যদি মনে মনে বলা কথাগুলো শুনতে পেত তাহলে বিরাট কেলেঙ্কারি হয়ে যেতো।
মিমু আর আশরাফুলের পাশে যে মেয়েটি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তার নাম মিতু। সেই ৬মাস আগে ট্রেনে দেখা হওয়া মিতু। মেয়েটির চোখের পলক পড়ছে না। এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বিস্ময় মাত্রাতিরিক্ত হলে মানুষের মধ্যে একধরনের ঘোর লাগা ভাব কাজ করে মিতুর অবস্থাটাও সেরকম। তার স্বাভাবিক হতে খানিক সময় লাগলো। আমি বললাম, কেমন আছো মিতু?
মিতু আমার প্রশ্ন অগ্রাহ্য করে বললো, আপনি সেদিন পালিয়ে গিয়েছিলেন কেন?
- কারণ মানুষ পালাতে ভালোবাসে।
- থাক জ্ঞানের কথা বলতে হবে না।
আশরাফুল আর মিমু অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম, চলো সবাই একসাথে রেললাইনে বসে চা খাব। হাঁটতে হাঁটতে চায়ের দোকানের কাছে আসলাম। সবাই কতো আয়োজন করে বসে চা খাচ্ছে। আমি ভাবছি অন্যকথা, কিভাবে পালানো যায়! এখান থেকে পালিয়ে গেলেও লাভ নেই। মিতু ঠিকই আমাকে খুঁজে বের করে ফেলবে। কারণ তার কাছে আছে আশরাফুল নামক সার্চ ইঞ্জিন।
.
রূপবতী মেয়েদের থেকে পালিয়ে বেড়ায় সাধু সন্ন্যাসীরা। আমি তাদের কেউ নই তবুও আমি পালিয়ে যাই। কারণ সুন্দরী মেয়েদের কাছে আছে হৃদয় ছিদ্র করার যন্ত্র।
|
চলবে...........
লেখা: Akram Hussain Tahosin

No comments:

Post a Comment