Monday 29 January 2018

প্রিয়মানব

#উড়োচিঠি
প্রিয়মানব,
আজ হঠাৎ তোমাকে নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হলো।জানি তোমাকে নিয়ে লিখা অপছন্দ তোমার কাছে, তবুও খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে নিয়ে লিখতে। তোমাকে জানানোর ছিল আমার কিছু না বলা অনুভূতির কথা।তাই জানাবো আজ।
জানো,মাঝে মাঝে খুব খু্ব ইচ্ছে করে তোমার বুকের বাম পাশটাতে মুখ লুকিয়ে খুব করে কাঁদতে, আর বলতে ইচ্ছে করে অনেক অনেক মিস করতেছি তোমাকে। অথচ তুমি মানুষটা সামনেই থাকবে তোমার বুকে-ই থাকবো তবু তোমাকে মিস করবো কি বোকা বোকা কথাই না হবে তখন!!! তখন তুমি পাগলী বলে আমার সিঁথিতে তোমার ভালবাসার পরশ বুলিয়ে দিবে। অনুভুতি টা এমনই প্রখর, হয়তো কাছে থেকেও বা সম্ভোগেও এ অনুভুতির শেষ হবে না কখনো, এ এক আলাদা অনুভুতি। এতটায় ভালবাসতে ইচ্ছে করে তোমাকে। দেহ দিয়ে নয় মনটা দিয়ে কাছে পেতে ইচ্ছে করে।মাঝে মাঝে মনেহয়, স্বপ্নের রাজকুমারের মতো তুমি আসবে আমার চোখে চোখ রাখবে, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখের ভাষা বুঝে নিবে। চোখের মাঝে দুজনের প্রেম প্রকাশ পাবে। অনেক গভীর হবে এই আমাদের প্রেম। কতই না পবিত্র হবে।।
কারো কারো জীবনে হয়তো ভালবাসাটা অপূরণীয় থেকেই যায়। হয়তো তোমার আমার ভালোবাসাটাও তেমন। অনেক ভালবাসি কিনা জানি না কিন্তু এখন থেকে তোমাকে হারানোর ভয়টা গ্রাস করে আছে। আচ্ছা!! তখন কি করে থাকবো, এখন তো চোখে হারাচ্ছি তখন কি হবে আমার যখন তুমি অন্যের হয়ে যাবে!! তখন তো অধিকারের ছিটে ফুটাও থাকবে না। বলতেও পারবোনা চলে যেয়েও না আমার একা একা লাগবে। বলতেও পারবোনা এত ঘন্টা আসো নি কেন? বলতে পারবো না রাত জাগো কেন? বলতে পারবো না....
জানো, কিছুদিন আগেও কল্পনা করতাম লাল বেনারসি শাড়ী পড়ার। আসলে বানারসি নয়, কোন দামি দামি শাড়ি গহনাও নয়,একদম সাদামাটা এক রাঙা শাড়ি পড়ার। খোলা চুল না হয় খোপা, কোন কাচের বা স্বর্নের চুড়িও না আজীবন মার্কা সিটিগোল্ড এর দুখানা চিকন চুড়ি থাকবে ঠোটে হালকা লিপিস্টিক চোখে কাজল বেস এতটুকু। এ রুপেই তুমি আমাকে অনেক অনেক ভালবাসবে। অথচ, এ কল্পনাগুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। তুমি অন্যের হয়ে যাবে ভাবতেই বুকের ভিতরটা যেন কেমন করে উঠে। এখন প্রায় কল্পনায় আসে কখন একখানা সাদা শাড়ি পড়বো, চোখে কাজলের জায়গায় সুরমা পড়বো, আর চুলগুলো দুভাগ করে বুকের উপর দিয়ে ছোটখাটো একটা শীতলপাটি তে উত্তর দক্ষিণ হয়ে মাটিতে শুয়ে থাকবো....
কতো সহজে অনুভূতি গুলো চলে আসে আবার হারিয়েও যায়। ভাল না বাসতে বাসতে তুমিও কখন যে ভালবেসে ফেললে আমাকে হয়তো নিজেও টের ফেলে না। আজ না নিজের উপর খুব ঘৃন্না হচ্ছে এতো সুন্দর মনের একটা মানুষের ভালবাসা পেয়েও হারাচ্ছি। ভালবেসেও নিজেকে আড়াল করার ব্যর্থ চেষ্টা করেও বারবার তোমার কাছে ধরা পড়েছি। এ কেমন নিয়তি আমাদের!!নিয়তির মারের কাছে আজ আমি বড্ড অসহায়। তোমাকে সত্যি জানবার বা জানাবার শক্তি সাহস কোনটায় নেই আমার। আমি যে কাউকে ভালবাসতে পারিনা। কারো ভালবাসা পাওয়ার অধিকার টাও যে আমার নেই! আজ হয়তো আটকানোর চেষ্টা করছি তোমাকে কিন্তু কাল!!! কাল তো কোন অধিকার থাকবেনা তোমার ওপর তখন কিভাবে আটকাবো!! হাহা তুমি জানতেও পারবেনা তুমি চলে যাওয়ার আগেই আমিই হারিয়ে যাবো....
প্রিয় মানব,, উড়োচিঠি তে জানিয়ে দিলাম না বলা সব কথা। জানি এ চিঠি তোমার কাছে পৌঁছোবেনা কখনো,তবুও লিখেছি তবুও জানিয়েছি মনের কথা। আজ কবিতা মনে পড়ছে খুব। ষাটে কিংবা সত্তুরের সেই কবিতাখানা মনে পড়ছে। সেই বয়সে যদি দুজনের দেখা হয় তখন!!! তখনও কি ভালবাসতে পারবো তোমায়!! চল্লিশটা গোলাপ হাতে তুমি কি চেয়ে দেখবে আমার ছুটে আসা!! আমার বুকের বাম পাশটাতে দাড়িয়ে নিয়ে তোমার ভালবাসা!!! জানা নেই জানা নেই। প্রিয়, এ মানুষটিকে খুঁজো না কখনো, এ মানুষটির সত্যি জানতে চেয়ো না কখনো। আর দশ জনের মতো ভেবে পাশ কাটিয়ে যেয়ো। আর তো মাত্র কটাদিন মাস শেষেই তো হয়ে যাবে অন্য কারো। অন্য কারো আকাশের তারা হয়ে তার আকাশে জ্বলজ্বল করবে, আমার আকাশটা তখন! থাক, আমার আকাশটা না হয় আঁধারে ঢেকে থাক। তবু তুমি ভালো থেকো ভালো রেখো নিজেকে।
কতো নক্ষত্রের রাত পেরিয়ে তোমায় পেলাম,
মোহের মত জ্বলজ্বলে স্মৃতি-
এভাবেই বুঝি পাওয়ার ছিলো?
এটাই বুঝি নিয়তি?
____ জীবনানন্দ দাশ
ইতি,
অদৃশ্যে থাকা বৃষ্টি।
(সবটা কাল্পনিক।)

অনুগল্পঃ--- #ভোরের_পাখি

অনুগল্পঃ--- #ভোরের_পাখি
লেখা-- আব্দুল হালিম (সাব্বির)
বিছানার উপরে ঠিক গা ঘেসে পড়ে থাকা নিথর স্মার্ট ফোনটির চিঁড়চিঁড়ে কান জ্বালা রিংটনের আওয়াজে সদ্য জেঁকে বসা ঘুমটা ভেঙ্গে থিতু বনে গেলো। তুঙ্গে উঠা রাগের মাত্রাটা যথা সম্ভব উবু করে ফোনটা রিসিভ করলাম। সাথে সাথেই একটি মধুর কন্ঠের সালাম....
----- আসসালামু আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্লহ্।
যদিচ কন্ঠটা বেশ মধুর কিন্তু তার চেয়েও অধিক মধুর ছিলো এই মূহুর্তের একটি প্রশান্তময় ঘুম। সুতরাং এই আপাত কচি মধুর কন্ঠেও আমার ক্ষিপ্ত হৃদয় তরল হলো না এতটুকুনও। সুতরাং সালামের জবাব পরিবেশনের পরিবর্তে ঘুমে জড়ানো গম্ভির গলায় বললাম,
---- কে.....???
----- আপনি আমাকে চিনবেন না। প্রথমেই আপনার ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
------ যা করবার তা তো করেই ফেলেছেন, এখন দুঃখ প্রকাশ করেই বা কি লাভ বলুন ? মাত্রই ঘুমটা ধরেছে এরই মধ্যে ফোন করে একটা বিশ্রী অবস্থা তৈরী করলেন। কে বলুন তো আপনি.....?
----- সরি, একটি প্রশ্নের জবাব দেবেন কি প্লিজ ? তাহলেই আমি কে, কেন ফোন করেছি সব খুলে বলছি ...
----- আজিব ব্যাপার..... আপনি তো দেখি প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করছেন।
----- সরি...
----- আচ্ছা বলুন কি প্রশ্ন...
------ আপনি কি মুসলিম....?
খানিকটা থমকে গেলাম। এ কেমন প্রশ্ন....? অচেনা লোকজন ফোন করলে সাধারণত, কোনো নাম বলে জিজ্ঞেস করে- আপনি কি অমুক, তমুক....? অমুকের ভাই, তমুকের বন্ধু....??? ইত্যাদি ইত্যাদি.... কিন্তু এই মেয়ে তো দেখি অদ্ভুদ প্রশ্ন করে বসলো।
মেয়েটি আমার হঠাৎ নিশ্চুপতা টের পেয়ে আবারো নাড়া দিয়ে বললো,
----- আপনি কি আপনার প্রশ্নটা বুঝতে পেরেছেন....?
------ হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি। কিন্তু এই প্রশ্ন কেন বলুন তো?
------ আপনারও তো দেখি প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করবার অভ্যাস আছে.....
------ ওহ সরি, হ্যাঁ আমি একজন মুসলিম।
----- শুকরিয়া..... ভাই, আমি মিথিলা বলছি, কোথা থেকে বলছি এটা জানা খুব জরুরী নয়। কিন্তু আমি কেন ফোন করেছি সেই কারনটা বলছি- আমি মূলতঃ ফোন করেছি আপনাকে ফজরের নামাজ পড়াতে ঘুম থেকে জাগানোর জন্য..... আপনি নিশ্চয় জানেন, " সকালটা যার আল্লাহর আনুগত্য দিয়ে শুরু হয়, সারাটা দিন তার জন্য আল্লাহ পাক ওয়াক্ফ হয়ে যান"
------ ওহ্!
"ওহ্" শব্দটির পরে আর কি শব্দ যোগ করা যায়, ঠিক সেই মূহুর্তে মাথায় খেললো না। তবে মেয়েটিই আপন মনে আমার অনতিবিলম্বে কিছু অবশ্যম্ভাবী উঁকি দিতে যাওয়া প্রশ্ন সমূহের উত্তর বলতে শুরু করলো যেন....
----- দেখুন, আপনি হয়তো ভাবছেন (?) আমি আপনার ফোন নংটা কোথায় পেলাম তাই তো....?
----- হুম..
----- আসলে এটা আমার একটা নিয়্যত বলতে পারেন, প্রতিদিন ফজরের ঠিক আগ থেকে শুরু করে আমি ১০ জন মুসলিম ভাই, বোনকে ফোন দিয়ে নামাজের জন্য জাগ্রত করার চেষ্টা করি। আর এই ফোন নম্বরগুলো আমি ইচ্ছামতো বানায় আর ফোন দেই।আজকে তারই অংশ হিসেবে আল্লাহ পাক আপনার ফোন নম্বরটিকে কবুল করেছেন।
---- বাহ চমিৎকার তো। কিন্তু বোনটি.... বাই চান্স আমি যদি কোন হিন্দু অথবা অন্য ধর্মের লোক হতাম তাহলে কি আপনার সেই লোকটিকে বিরক্ত করা হতো না....?
----- ভাই, ভালো প্রশ্ন করেছেন। জবাবটা দুই ভাবে দিতে পারি- (১) দেখুন,কোনো এলাকায় যদি অন্য ধর্মের লোকজনও বসবাস করে তাহলে কি সেই এলাকায় মসজিদের মাইকে ফজরের আযান দেয়া নিষিদ্ধ..?
মিথিলার জবাব শুনে নির্বাক হয়ে গেলাম। যেন এমন প্রশ্নের উত্তর তার রেডিমেট তৈরী করাই ছিলো।অগত্যা তার প্রশ্নে সাঁয় দিতেই হলো।
----- না নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু দুরের মাইকে আযান দেয়া আর ফোনে সজাগ করার ব্যাপারটা কি এক.....?
----- না এক নয়। আপনার এই প্রশ্নের উত্তর দ্বিতীয় ভাবে দিচ্ছি- (২) দেখুন, আমার জানা মতে সকল ধর্মেই অন্য ধর্মের প্রতি শীতিল মনোভাবের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং অন্য কোন ধর্মের কোন ভাই অথবা বোনের কাছে ফোন দিয়ে বসলে আমি আমার উদ্দেশ্যটা বলে দুঃখ প্রকাশ করি। এতে এই অবধি কেউই ক্রোধান্বিত হোন নি..... তাছাড়া হয়তো জেনে থাকবেন, রসুলুল্লাহ (সঃ) থেকে শুরু করে প্রত্যেক আমীরুল মু'মীনীনগণ ফজরে মসজিদে যাবার সময় উচ্চস্বরে সবাই লোকজনকে নামাজের জন্য ডাকাডাকি করতেন আর যেতেন। সেই সময়ও তো অনেক মুশরিক আরবে ছিলো, তাই বলে কি আপনি বলবেন, উনারা ভুল কাজটি করতেন......?
----- না।
নিঃসঙ্কুচে জবাব দিলাম। মেয়েটি আরো বলে চললো,
----- এছাড়া দেখুন, মাত্র ১০ ভাগ সংখ্যালঘুদের জন্য কি ৯০ ভাগ মুসলিমের মাঝে এই ফোনটা দেয়া কি আমার অযৌক্তিক হবে......???
মিথিলার এমন সাঁড়াশী বিশ্লেষণের মাঝে পড়ে এখন মনে হচ্ছে আমার নিক্ষিপ্ত প্রশ্নটা যেন বড়ই অসহায় হয়ে পড়েছে। মেয়েটা তার অখন্ড যুক্তির মাঝে আমার সেই প্রশ্নটিকে এক প্রকার কাঁবু করে ফেলেছে।
আমার প্রতিউত্তরের অপেক্ষা না করেই মিথিলা আরো বলে চললো,
---- প্রায় ৬ মাস অবধি এই কাজটি আমি করে যাচ্ছি, আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫-৬ জন অন্য ধর্মের ভাইদের কাছে ফোন গিয়েছে বাঁকি সব ফোন আল্লাহর রহমতে মুসলিমদের কাছেই পৌঁছেছে.....
----- হুম.... আপনার কথায় বেশ যুক্তি আছে।
------ ধন্যবাদ, ভাই আশা করছি- আপনি এখন নামাজ আদায়ের জন্য বিছানা ছেড়ে উঠবেন এবং নিয়মিত যথাযুক্ত নামাজগুলো আদায় করবেন, ইনশাআল্লাহ্ ।
----- হুম, উঠবো......
----- যাজাকাল্লহ্, আল্লাহর রহমতে ভালো থাকবেন আর আমার এবং সমস্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করবেন। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ্।
বলেই সেই মধুর কন্ঠটি শূন্যে হারিয়ে গেলো। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে মিথিলার ফোন নম্বরটি দেখছি, যেন অপরূপ কোন সুন্দরীকে দেখছি। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার ফলে ক্লান্ত চোখের কুটুরি চিঁড়ে কয়েক দলা পানি গড়ে পড়তে লাগলো। সারা রাত ধরে ফেসবুকিং আর ইউটিউবিং করে করে চোখ জোড়া ভীষণভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, সাথে শরীরটাও। চোখটা যেন আবার বুজে আসতে চাইছে।কিন্তু মন থেকে সদ্য কেটে যাওয়া মধুর কন্ঠটির সুমধুর বানীগুলো মৌমাছির মতো হৃদয় মঞ্চে গুনগুন করে বাজতে লাগলো অবিরাম.......
ভাবনার গোয়ালে অন্যায় অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে হঠাৎ শয়তান যেন তার সমস্ত শক্তি দিয়ে দোয়ার বন্ধ করতে উদ্ধত হয়ে পড়েছে। মিথিলার কন্ঠ এসে বাঁধা দিলো- " সকালটা যার আল্লাহ পাকের আনুগত্য দিয়ে শুরু হয় সারাটা দিন আল্লাহ পাক তার জন্য ওয়াক্ফ হয়ে যান"
অনেক কষ্টে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম। কিন্তু শয়তানের মন্ত্র যেন আমাকে ছাড়তেই চাইছে না। অবশেষে মনকে বুঝালাম, এতটা রাত যদি, বন্ধুদের জন্য কিংবা নিজের প্রয়োজনের জন্য জেগে থাকতে পারি(?) তাহলে আল্লাহ পাকের আনুগত্য স্বীকারের জন্যে কি কয়েকটা মিনিট সময় হবে না.......!!!
মনটাকে বিধিবদ্ধ করে সোজা উঠে ওয়াশরুমে অযু সেরে নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষে সে কি প্রশান্ত বোধ হচ্ছিলো- তা যে আমি কোন ভাষায় প্রকাশ করি....!!!
যাইহোক, সারাটি দিন এত নির্মল, পবিত্র আর চিন্তামুক্ত কাটলো তা অন্য যে কোন দিনের চেয়ে অতিশয় উত্তম। তবে সারাটা দিনে একটি মুহুর্তের জন্যেও মিথিলার সেই কথাগুলো ভুলতে পারিনি। সেই নম্বরটিতে অজস্রবার ফোন দিয়েছি। বারবার-ই বন্ধ পেয়েছি। খারাপ লেগেছে খুব, কিন্তু হতাশ হয়নি। কেন জানি মনে হচ্ছে এই মেয়েটাকে আমার খুব দরকার, একান্ত দরকার। না জানি- মেয়েটিই আমার জান্নাতে যাবার সিঁড়ি। এই সিঁড়ি আমার চায়-ই চায়।
পরদিন ভোরের অনেক আগেই ঘুম থেকে জাগলাম শুধু সেই ভোরের ঘুম ভাঙ্গানী মধুর পাখিটিকে ধরবার জন্যে। বেশ কয়েকবার ফোন দেবার পর লাইনে পেয়ে গেলাম পাখিটিকে। গলাটায় কেমন একটা জড়তা পাঁকলো আমার। মিথিলা সালাম দিলো,
------ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ্। কে বলছেন।
----- আমি সাব্বির, গতকাল ভোরে আপনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন নামাজের জন্য।
------ আলহামদুলিল্লাহ, মাশাআল্লাহ! আজ দেখি আপনি অনেক আগেই জেগে উঠেছেন।
----- হুম, গতকাল সারাটা দিন, আপনার এই নম্বরে অসংখ্যবার ফোন দিয়েছি, প্রত্যেকবারই বন্ধ পেয়েছি।
----- ভাই, আমি এই সীমটা শুধুই এই কাজেই ব্যবহার করি। সেই জন্য এটা খোলা থাকে ফজরের সময় পর্যন্ত।
----- ধারণা করেছিলাম।
----- জ্বী, কিন্তু আমাকে এতবার ফোন দেবার কারনটা কি.....?
----- কারন আছে..... অনেক বড় কারন। আমি সাব্বির, ভার্সিটিতে "আইন " বিষয়ে পড়াশুনা করছি ৪র্থ ইয়ার।পাশাপাশি কোর্টে প্র্যাক্টিসও করছি।
----- মাশাআল্লাহ্! কিন্তু এইসব আমাকে বলার কারন কি.....?
----- কারন আছে..... অনেক বড় কারন। আপনি কি করেন একটু বলবেন প্লিজ.....???
------ আমিও পড়াশুনা করি। অর্থনীতি তে অনার্স ২য় বর্ষ। আশা করি আর কিছু জানতে চাইবেন না।
----- মাশাআল্লাহ্। ঠিক আছে..... বাট আমি মনে করেছিলাম আপনি কোন মাদ্রাসায় পড়ুয়া হবেন। এমন উদ্দোগ অনার্স পড়ুয়া মেয়ের হতে পারে, ভেবে বিস্মিত হচ্ছি।
----- আমি একজন মুসলিম! এটা আমার দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে।
----- হ্যাঁ ঠিক আছে...... এই জন্যেই আপনাকে আমার ভীষণ দরকার।
------ মানে.....?
----- না মানে, দেখুন- প্রত্যেকটা ভালো মন্দ কাজের পেছনে কোন না কোন ব্যক্তির বিশেষ অবদান থাকে। তাই না?
----- হ্যাঁ থাকে.....
------ কারো কাঁধের উপর ভর দিয়েই তো মানুষ উপরে উঠে, তাই নয় কি....?
------ হ্যাঁ তাই।
------ কেউ সিঁড়ি হয়েও সাহায্য করে.... তাই না....?
----- হ্যাঁ, কিন্তু এসব কেন বলছেন বলুন তো....? আমার কাজে দেরি হচ্ছে। ১০ জন নতুন লোককে ফোন দিতে হবে......!
------ তুমি টেনশন করো না। আমি পাঁচ জনকে দিবো তুমি পাঁচ জনকে দিও।
------ হাহাহাহাহাহা আপনি কেন দেবেন...?
----- তুমি যেই কারনে দাও সেই কারনেই।
----- হাহাহাহাহা আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে তো বেশ ভাল। তবে পাঁচ জন করে নয়, দশজন করেই হোক। সংখ্যাটা বাড়বে....
----- আচ্ছা তাই হবে..... তবুও আমার জান্নাতে যাবার সিঁড়িটা চায়।
------ মানে......?
------ মানে..... কিভাবে কথাটা বলবো, বুঝতে পারছি না, তবে বলাটাও জরুরী.... অভয় দিলে বলবো...
----- জ্বী, নির্ভয়ে বলুন....
------ আসলে.... আমার কেন জানি মনে হচ্ছে- আমার জান্নাতে যাবার সিঁড়িটা হলে - তুমি, আমার সেই সিঁড়িটা খুব দরকার......
মিথিলা হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে গেলো। আমার শরীরটাও কাঁপতে লাগলো বেদুমচে। না- জানি মেয়েটা কি নাকি ভাবছে। কিন্তু আমারই বা কি করার আছে....? আমি সত্যটা উৎঘাটন করেছি মাত্র। নিজের দাবিতে অটল বাক্যে বলেই চললাম,
------ মিথিলা, আমি কোন কিছু ভুল বলে থাকলে মাফ করে দিও। তবে আমার হৃদয় বলছে, তুমি আমার জান্নাতে যাবার অসীলা হতে পারো। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চায়। এটা তো কোন অপরাধ নয়....
এবার সোজা সাপ্টা ফোনটা কেটে দিলো মিথিলা। নির্জিব পদার্থের মতো নিশ্চল বসে বসে প্রতিফল ভাবতে লাগলাম। আমি কি ভুলই করলাম....? কিন্তু তাকে তো আমি বৌ হিসেবেই চায়। পরে বেশ কয়েকবার ফোন দিলাম প্রত্যেকবারই ফোনটা কেটে গেলো। হৃদয়টা যেন দুমড়ে গেলো আমার। বিধ্বস্ত মনে উঠে গিয়ে অযু সেরে এসে মিথিলার কথা মতো ১০ জন ভাইকে ফোন দিয়ে জাগিয়ে দিয়ে নিজেও নামাজ আদায় করলাম।
নামাজ শেষে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়েছি। প্রচন্ড নিঃসঙ্গ মনে হচ্ছে নিজেকে। কত বড় সম্পদ-ই না হারালাম। এর বাহিরে কিইবা করার ছিলো আমার(?)
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা। ঘুম ভাঙ্গলো প্রায় সকাল ১০টা নাগাদ। ঘুমের ঘোরে ফোনটা হাতে নিয়েই দেখি- একটি এসএমএস, মিথিলার নম্বর থেকে এসেছে। সাথে সাথে সারা শরীরে যেন ভূমিকম্প বয়ে গেলো। তড়িৎ কাঁপতে কাঁপতে এসএমএসটা পড়তে শুরু করলাম। তাতে লিখা.....
" মিস্টার সাব্বির, ঐ মূহুর্তে ফোনটা কেটে দেবার জন্য দুঃখিত। আসলে ফোনটা না কেটে উপায় ছিলো না, কেননা, তখন আপনার অমন অকস্মাৎ প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। নামাজ শেষে দু' রাকাত নফল আদায় করে সিদ্ধান্ত নিলাম। আর সেই সিদ্ধান্তটা হলো- সিঁড়ি হিসেবে যখন আমাকেই পছন্দ হয়েছে তখন আর কিইবা করার আছে বলুন(?) আল্লাহ পাকের নামে আপনার পদজোড়া সিঁড়িতে স্পর্শ করুন। আল্লাহ চাহেন তো আপনার আর আমার তথা আমাদের জান্নাত গমনের ইচ্ছা পূরণ হবে, ইনশাআল্লাহ্। আমার ঠিকানা লিখে দিচ্ছি--এই ঠিকানা অনুযায়ী আমার সম্মানিত আব্বুজানের কাছে সবিনয় প্রস্তাব প্রেরণ করুন। আশা করি তিনি সম্মতি দেবেন। আল্লাহ পাক আমাদের কবুল করুন.....আমিন"
অনতিদীর্ঘ এসএমএসটি পড়তে পড়তে কখন যে চোখের জলে বালিশ ভিজে একাকার হয়ে গেছে তা টেরই পায় নি। তাহাকে পাইলাম, যেন আমি সমস্ত পাইলাম...............

নারী মুক্তি নয় নারী মুক্ত!

নারী মুক্তি নয় নারী মুক্ত!
ফয়সাল আহমেদ
আমি আফসানা , মুসলিম ঘরে আমার জন্ম, আমার মা খুব ধার্মিক, ইসলামের প্রতিটি আদেশ নিষেধ মেনে চলতেন, বাবা ছিলেন তার বিপরীত শুক্রবার ছাড়া বাবাকে কখনো নামায পড়তে দেখিনি,
ছোটবেলা থেকে মা আমাকে ইসলামের কথা বলতেন, খোদাভীতির কথা বলতেন,
জান্নাত-জাহান্নামের কথা বলতেন,আমি মা'র সঙ্গে প্রতিদিন নামায আদায় করতাম, সকালে মক্তবে যেতাম, কিছুদিন পর স্কুলে ভর্তি হলাম, পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত খুব ভালোভাবে পড়াশুনা করলাম। এরপর মা বললো মেয়েদের বেশি পড়াশুনার প্রয়োজন নেই, স্বামীর যাবতীয় হিসাব নিকাশ করতে জানলে চলবে। আমি খুব মনে কষ্ট পেলাম, আমি আজ মেয়ে হয়েছি বলে আমাকে আর পড়তে দেওয়া হচ্ছেনা, আমার কত স্বপ্ন! ভালভাবে পড়াশুনা করে একজন ভাল ডাক্তার হবো বা আদর্শবান শিক্ষিকা হবো।
আমার মনের কথা বাবাকে বুঝিয়ে বললাম,বাবা মাকে অনেক বকাঝকা করে আমায় ষষ্ট শ্রেনীতে ভর্তি করালেন।
আমি খুব আনন্দের সাথে পড়তে লাগলাম, ভাল খারাফ বুঝতে শিখলাম। পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন গল্প উপন্যাসের বই পড়তে পছন্দ করতাম। লাইব্রেরি থেকে ভাল ভাল বই সংগ্রহ করতাম, আমি স্কুলে পড়ার পাশাপাশি বাহ্যিক বইয়ের প্রতি প্রভাবিত হয়ে পড়ি। বিভিন্ন লেখকদের বই পড়ে ধর্মের প্রতি কেমন অনিহার সৃষ্টি হতে লাগলো, এখন ধর্মের কথা ভাল লাগেনা, মনে হয় যেন ধর্ম মানুষের বানানো রীতিনীতি, মা'কে মাঝেমাঝে ধর্মের ব্যপারে আজে বাজে প্রশ্ন করি, মা বলতো! এসব বলেনা গুনাহ হবে, আমি মনে মনে হাসতাম,স্কুলে টিচারদের কাছে ধর্ম বিষয়ক প্রশ্ন তুলে ধরতাম তারা কোন উত্তর দিতে পারতোনা, তাই আমি বললাম, এসব ধর্ম তর্ম কিছু নেই, আমার নামাজ কালামের প্রতি অনিহা দেখে মা প্রচন্ড রেগে যেতেন,এবং তা নিয়ে প্রতিদিন রাগারাগি করতেন, মাঝেমাঝে দুঃখ করতাম নারী হয়ে জন্ম না হয়ে যদি পুরুষ হয়ে জন্ম নিতাম,তাহলে যখন খুশি তখন যেখানে সেখানে যেতে পারতাম, তখন নারী মুক্তির পথ প্রদর্শক, শহীদ মাতা জাহানারা ইমাম,বেগম সুফিয়া কামাল ও তাসলিমা নাসরিনের বই অধ্যায়ন করতে লাগলাম, মনে মনে ভাবতে লাগলাম আমরা মেয়েরা কম কিসের আমরা ও পারি সব করতে, মনটা আনন্দে ভরে গেল, আগে নারী বলে যে একটা মনের ভেতর ভয় কাজ করতো তা এখন আর করেনা, এখন সবার সাথে অবাধ মেলামেশা করি।
এভাবে চলতে চলতে স্কুল জীবন শেষ করে কলেজ জীবনে পাঁ বাড়ালাম তাতেও কত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আসতে হলো।
কলেজ লাইফে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যোগ দিলাম,বেশ সুনাম অর্জন হলো, মাঝে মাঝে লেখালেখি ও করতাম নারী মুক্তি নিয়ে।
হঠাত একদিন সংগঠনের বিজয় বাবুর মুখে আমার নাম শুনলাম,আমার অনেক প্রশংসা করলেন।আমার কাজে তারা সাপোট দিতেন,আমাকে বলতেন এগিয়ে যাও তোমরা একদিন বড় কিছু হবে, তিনি আমার কয়েকবছরের সিনিয়র ছিলেন,ওনার মুখে আমার প্রশংসা শুনে, ওনাকে আমার ভাল লেগে গেল, একসময় আমাদের ভাল সম্পর্ক হয়ে গেল, আমরা একসাথে শপিং এ যেতাম,অনেক ঘুরাফেরা করতাম কলেজ ফাঁকি দিয়ে। একদিন বিজয় বাবু আমায় ফোন করে বললেন,আফসানা! চলো আজ আমরা রেষ্টুরেন্ট এ লাঞ্চ করবো,আমি সায় দিয়ে চলে গেলাম রেষ্টুরেন্ট এ, ওখানে বিশ্রামের আলাদা রুম ছিল,আমরা লাঞ্চ করে, ওখানে কিছুক্ষন সময় কাটালাম, হঠাত বিজয় বাবুর চোখে আমার চোখ পড়লো উনি গভীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন, আমি লজ্জায় মাথানিচু করে ফেল্লাম, কিছুক্ষন পর উনি আমায় জড়িয়ে ধরলেন, আমি চিৎকার করতেই উনি মুখ চেপে ধরে ফেললেন, এবং উনি আমায় --- করলেন। আমি লজ্জায় ঘৃণায় কিছু না বলে অশ্রু ভরা জল নিয়ে চলে এলাম ঘরে, তখনও বুঝতে পারিনি আমি কি করলাম। চলেছি নারী মুক্তির সংগ্রাম নিয়ে, চলতে চলতে কয়েকমাস পর আমার পেট কেমন ভারি ভারি হতে লাগলো, আমি অসম্ভব কিছু অনুভব করতে লাগলাম, বাবা মা আমার এ অবস্থা দেখে লজ্জায় যেন তাদের মুখ লুকানোর জায়গা ছিলনা, তারা আমায় ত্যজ্য করেছেন, আমি কিছুদিন সংগঠনের অনুদানে চললাম, পেটের সন্তানকে নষ্ট করে ফেললাম,তারপর আমার শুরু অন্য এক জিবন।
আমি সারাদিন পুরুষের বিরুদ্ধে লেখালেখি করি, নারীদেরকে অন্ধকার ঘরের থেকে বেরিয়ে বাহিরের আলো বাতাস গায়ে লাগানোর জন্য উদ্ভুদ্ধ করি,
আমার মনে প্রচুর জেদ ছিল, আমি যেভাবে নষ্ট হয়েছি, তাদেরকেও সেভাবে নষ্ট করবো, আমার কলমে তাদের জন্য বিভিন্ন প্রলোভিত করার কথা উল্লেখ করতাম, ইন্টারনেট এ আমার কথাগুলোকে প্রচার করতাম, আমার লেখা দেখে অনেকেই প্রভাবিত হয়েছে, আমি তাতে আনন্দিত হতাম, এগুলোর মাধ্যমে আমার অনেক টাকা উপার্জন হতো।
একসময় ফেইজে এক বন্ধুর সাথে আমার কথা হয়, ধর্মের ব্যাপারে অনেক প্রশ্ন করেন, আমি বলি ধর্ম বলতে কিছু সবকিছুই মানুষের বানানো, তিনি আমায় স্রষ্টাকে চিনিয়েছেন, পরকালের কিছু ফিরিস্তি দিয়েছেন, আর কিছু ইসলামিক বই সংগ্রহের জন্য আদেশ করলেন, আমি ধীরে ধীরে বইগুলো অধ্যায়ন করতে শুরু করলাম, যতই বই পড়ছিলাম, আমি মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা হাজার প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে পাচ্ছি। ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলাম, নারীদের সম্মান বাহিরে নির্লজ্জ ভাবে ঘুরাফেরা করার মধ্যে নয়, পর্দার ভেতরে থেকে আল্লাহ্‌ র ইবাদত করার মধ্যে শান্তি।
নারী মুক্তির প্রয়োজন নেই, নারীরা মুক্ত আপন গৃহে।
ইসলাম নারীকে সবচেয়ে বেশী সম্মান দিয়েছেন, খুবই মূল্যবান জিনিস যেমন মানুষ খুব আগলে রাখেন, ইসলাম বলেছেন নারীদের পর্দায় থাকতে, কোন পর পুরুষের সাথে কথা না বলতে, কারন প্রত্যেক দামি এবং মূল্যবান জিনিসের প্রতি মানুষের লোভ থাকে, নারী ও ঠিক তেমন।
বর্তমানে যে নারীবাদী পুরুষ নারীদের কে উৎসাহ করছে পর্দা থেকে বেরিয়ে আধুনিকতায় পা বাড়াতে,আসলে কোন আধুনিকতা নয়, তারা নারীদের ভোগ করার জন্য বড়শির মত টোব পালাচ্ছে, আর কিছু কিছু মেয়ে টোব গিলছে অমনি ধরা পড়ে যাচ্ছে, হিংস্র পশুদের বড়শিতে, ইদানীং টিভিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়,
"দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়" এর অর্থ হচ্ছে তোমরা আসো, ঘর থেকে বেরিয়ে আমাদের কাছে ধরা দাও, আমরা তোমাদের ভোগ করি।
,
,
মন্তব্য করতে ভুল করবেন না।

সালিশ

#_সালিশ
মহেষপুরের সমরেশের কনিষ্ঠ পুত্র গণেশ রে লইয়া উত্তরপাড়া তোলপাড়। মাসী-পিসিদের কানাঘুষা, বাচ্চা-ছেলেদের মাঝে উৎসব-উৎসব রব ও মুরুব্বি-পন্ডিতদিগের মাঝে 'পান চিবানো মুচকি হাসি' লক্ষ করা যাইতেছে। আজ সাঁজের বাদে সালিশ।
কী করিয়াছে গণেশ?
তামাকজাত অসূচি দ্রব্য সে সেবন করিয়াছে। পাড়ার যুবসমাজ কে ধ্বংসের পায়তারা করিয়াছে। পাড়ার ইজ্জতহানি করিয়াছে। অতি উত্তম শাস্তি তাহার প্রাপ্য।
কমলাকান্ত আফিমখোর, বিবেকখোর নহে। শীতের সন্ধ্যায় গায়ে কম্বল জড়াইয়া কাঁপিতে কাঁপিতে উপস্থিত হইলুম সালিশ প্রাঙ্গনে।
সুহাস রয়, নিতাই পাল, অভিজিৎ ঠাকুর সহ সবাই উঠিয়া সৌজন্যতা করিল।
নিতাই বলিলঃ মশাই, শুনিয়াছি আপনার শরীর বিশেষ খারাপ আছে, তাই নিমন্ত্রণ জানাইয়া ধৃষ্টতা করিলাম না।
আমিঃ "তোমাদের আমন্ত্রণের ধার আমি কখনোই ধারিনাই নিতাই, না আজ তোমাদের কোনো সালিশে আমি আসিয়াছি। আমি নিজেই এক বিচার লইয়া আসিয়াছি এবং ইহাই অগ্রে করিতে হইবে।
উপস্থিত সবাই বলিতে লাগিলো, "ব্রাহ্মণ মশাই কী বলেন আগে শুনি। বাদে গনেশের বিচার করা যাইবে!"
কাঠের হাতাওয়ালা কেদারায় আমারে বসাইয়া দিল নিতাই পাল। আমি সুহাস রয় কে উদ্দেশ্য করিয়া বলিলামঃ মশাই, আপনাকে বলিতেছি।
সুহাসঃ আজ্ঞে, বলুন।
আমিঃ আপনি এলাকার কর্তা বলিয়া গেলো মাসে মহকুমার সাব-রেজিস্ট্রি অপিস থেকে দুইজন সহকারী হলফ রাইটার চাহিলো, আপনি এলান করিলেন। আমাদের গণেশ সহ এলাকার এন্ট্রান্স পাশ আরো চারিজন আর্জি করিলো আপনার নিকট। প্রত্যেকেই তাহাদের যথার্থ যোগ্যতা প্রদর্শন করিলো। আপনি সমরেশ এর পুত্র গণেশ ও বরকত মিয়ার পুত্র সেলিম এর কাছে ৮০০/- টাকা করে উপরি চাহিলেন। ৮০০/-টাকা সমরেশের পরিবারের ২ মাস চলিবার খোরাকি বয় কি! সে কী করিয়া এত টাকা প্রদান করিবে? উপরি দিতে ব্যর্থ বলিয়া গণেশ চাকুরীখানা পাইলনা, চাকরী টা পাইল নিতাই এর ভাতিজা শুভাস।
মশাই, এই ৮০০/- টাকা না নিলে তো আপনার বিশেষ কোনো ক্ষতি হইয়া যাইত না, কিন্তু সমরেশের মত দরিদ্র পরিবারে এহেন চাকুরী না পাওয়াটা অনেক। আর গনেশের মত কোমল উঠতি যুবকের নিকট এটা জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট রুপ, যা আপনি তাহাকে দেখাইলেন। আর গণেশ সমাজের এহেন অসভ্য আচরন উপলব্ধি করিয়া হতাশ হইয়া গিয়াছে এবং এই হতাশা হইতে পরিত্রাণ কল্পে এহেন কর্ম সাধন করিয়াছে।
আমি মনে করি, গনেশের এহেন অপরাধের পেছনে স্থূল কালপ্রিট আপনি। আপনি দাড়াইয়া নিজের বিচার নিজে করিয়া চলিয়া যান। ভগবান চাহেতো গনেশের বিচার আগামীকল্য করা হইবে।"
"সুহাস মহাশয়" আদবের সহিত সালিশ ছাড়িয়া চলিয়া গেল।
প্রচণ্ড শীত, ঘন কুয়াশা ভেদ করিয়া হাটিয়া বাড়ি ফিরিতেছি। বুকফাটা চাপা কান্নার একটা ভয়ংকর শব্দ আমার পেছনে পেছনে আসিতেছে।
পেছনে ফিরিয়া বলিলামঃ "কে রে তুই বাবা? গনেশ?
চিৎকার দিয়া হিংস্র আবেগ লইয়া আমারে জরাইয়া ধরিয়া কাঁদিতে লাগিলো সমরেশের মেধাবী ছেলেটা।
কাঁদ বাবা, কাঁদ!
লেখাঃ Raju Therebel

মুরগীর রান বিড়ম্বনা

মুরগীর রান বিড়ম্বনা
আমার ছোটবেলার খাদ্যাভ্যাসের একটা বড় অংশই কেটেছিল,মুরগীর রান খেয়ে।এখন বড় হয়ে যাওয়ার পরও মুরগীর রান খেতে গিয়ে প্রচুর বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে, হচ্ছে । যেমন-
১.কাজিন নাফিসার সাথে খেতে বসা হলো।খাওয়ার টেবিল ঘরে নেই।ছোট পরিবার।এধরণের পরিবার আমার খুব পছন্দের। বিবাহের পর স্বামী স্ত্রী ছোট্ট একটা বাসায় থাকবে।সারাদিনের ক্লান্তি শেষে স্বামী যখন বাসায় ফিরবে চোখে ঘুম নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকা স্ত্রীর চোখকে ভালবাসা জাগিয়ে দিবে।সে গিয়ে চুলোয় খাবার বসাবে।দুজন রাত সাড়ে বারোটায় খেতে বসবে।খাওয়া শেষে একসাথে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করবে।মেয়েটার চোখে যখন ঘুম চলে আসবে,ছেলেটা তখন তার মাথা নিজের বুকে টেনে আনবে।ঘরে নূতন সন্তান, ভালবাসার ফলাফলকে ঘিরেও থাকবে, সত্য চাহিদা।নাফিসা ক্লাসে আমার চে' একবছরের জুনিয়র, কিন্তু বয়সে দু'মাসের বড়।আমি নাফিসার সাথে বিছানায় খেতে বসেছি।ভাত প্লেটে নেয়া হয়েছে।সামনে মুরগীর মাংস রাখা আছে।এক পিস রান,আর বাকি দুটা ছোট পিস।নাফিসা ভাতে বিচ্ছিরি ভাবে লবণ মাখছে।আমি তার দিকে তাকালাম, তার কোনও ভাবান্তর নেই।ফুপু সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন।তিনি আমার প্লেটে মুরগী না তুলে দিলে নাফিসার তুলে দেবার কথা।কিন্তু কেও কিছু করছে না। আমাকে নিজেই মুরগীর মাংস প্লেটে তুলতে হবে।আমি কোন পিস নিবো,তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।আমি মেহমান হিসাবে রানের পিসটা নিজের প্লেটে তুলে নেয়াটা শোভনীয় নয়।রানটা নাফিসার প্লেটে তুলে দেয়া যেতে পারে।তারপর ছোট দু'পিস নিজের প্লেটে তুলে নিব।ছোট দু'পিস নিব, নাকি একপিস নিব, তা নিয়েও কিছুক্ষণ ভাবলাম। দু'পিস নিলে ফুপু হয়তো খুশিই হবে, কিন্তু আমিই ফুপুকে টেনে এনে মনেমনে ভাবব, ছোটলোকের বাচ্চা দু'পিস নিছে কোন লজিকে? মুরগী কেও দু'পিস নেয়? মেহমানদের আরেকটু বিবেচনা করে চলা উচিত। এক পিস নিলেও বিপদ! ফুপু রেগে উঠে বলবেন, কি ভাবিস কি তুই আমাদের? আমরা খেতে পারি না? আয় রান্নাঘরে আয়।দ্যাখে যাবি কত পিস মুরগী রান্না হয়েছে।ঠান্ডা হয়ে যাবে দ্যাখে অল্প অল্প করে আনছি,আর তুই ভাবছিস, কম রাঁধা হয়েছে...! তুই এভাবে ভাবতে পারলি আমাদের ?আমি নাফিসার দিকে তাকালাম। সে এখনও প্লেটে লবণ মেখে যাচ্ছে। ছোট বাটির প্রায় সব লবণই মেখে ফেলেছে।অসভ্য একটা মেয়ে! আমি এ মুহূর্তে কিছু না ভেবে অথবা অনেক ভেবে ছোট একটা পিস নিজের প্লেটে তুলে নিলাম।ফুপু দৌড় দিয়ে এসে আমার হাত থেকে চামচ নিয়ে ফেললেন। আমি নিজের প্লেটে মাংস রাখার আগেই তিনি নিজেই রানের পিসটা প্লেটে তুলে দিলেন।আর নাফিসা তখনও ভাতে লবণ মেখে যাচ্ছে।
২.
আমাকে খেতে বসানো হয়েছে।আমি এখন জেঠাতো বোনের বাসায়। আপুর তিন ছেলে।তারা যথাক্রমে ফাইভ,সেভেন আর এইটে পড়ে।এইটে যে পড়ছে সে এখনও স্কুল থেকে আসে নি।বাকি দুটা টিভিতে কার্টুন দ্যাখছে।দুলাভাই অফিসে।আমি একা খেতে বসেছি।আমার একাকীত্ব দূর করার জন্য আপু তার ছেলে দুটাকে কান টেনে টিভির সামনে থেকে আমার সামনে নিয়ে আসলেন।দাজ্জাল কণ্ঠে বললেন,খেতে বস বাবা।তারা চরম বিরক্ত নিয়ে খেতে বসল।আর একটু পরপর আড়চোখে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। মনেমনে অবশ্যই ভাবছে,আমি কেন শুধু শুধু ওদের বাসায় আসলাম!না আসলে তো ওদের কার্টুন দ্যাখায় ব্যাঘাত ঘটতো না।আমি অপরাধীর মতো বসে রইলাম।সামনে প্লেটে পোলাও রাখা হয়েছে।আপু একটু পর রোস্ট আনলেন।এনেই বত্রিশটা দাঁত বের করে রানের বিশাল পিসটা আমার প্লেটে তুলে দিলেন।পিচ্চি দুটা একসাথে আমার প্লেটের দিকে তাকাল,আমি অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।অপরাধটা অবশ্য আমার নয়, আপুর।ফাইভে পড়া পিচ্চিটা মিনমিন করে বলে উঠল, আমি রান খাব।আমি বিপাকে পড়ে গেলাম।আপু গরম চোখে তার দিকে তাকালেন।বাচ্চাদের নৈতিক শিক্ষা দিতে না পারার ব্যর্থতায় তার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। আমি কি করব বুঝে উঠতে পারলাম না।আমার প্লেট থেকে রানটা উঠিয়ে তার প্লেটে দেয়া যেতে পারে।আবার তাতে পিচ্চিটা যদি হুংকার ছেড়ে বলে,আমি অন্যকারও পাতের জিনিশ খাই না,তখন...? আমি বুকে সাহস এনে বড় করে একটা দম নিয়ে আমার প্লেটের রানটা পিচ্চিটার প্লেটে তুলে দিতে যাচ্ছি, এমন সময় আপুর কোমল হাত আমার হাতটা ধপ করে ধরে ফেলল।গর্জে উঠে তিনি বললেন,তুই কি ভেবেছিস, রান একটাই রান্না হয়েছে? অবশ্যই না।রান দুটাই রেঁধেছি।মামাগিরি বন্ধ করে চুপচাপ খা।পিচ্চিটা যেন চোখে আলো খুঁজে পেল,আমিও আমার পথ খুঁজে পেয়ে রানে একটা কামড় দিলাম।
৩.
বিয়ের অনুষ্ঠানে খেতে বসেছি।ফুফাতো বোনের বিয়ে।প্রেমের বিয়ে না,ধরে আনা বিয়ে।আমি হাসিমুখে সামনের বড় বাটিগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি।মুরগীর রোস্ট আসামাত্রই যে যার প্লেটে পছন্দের টুকরো তুলে নিচ্ছে।পরিচিত ভাইবোন ছাড়াও আশেপাশে অপরিচিত মুরব্বিও আছেন।আমি এক পিস রান নিলাম।বিয়েতে নাকি সবার খাওয়া বেড়ে যায়,আমার কমে যায় কেন তা ভেবে আমি নিজেও রোমাঞ্চিত।খাওয়া শেষে অভ্যাস মতো রানের হাড্ডি কামড়িয়ে কামড়িয়ে ভেতরের কালো বস্তুটা (মজ্জা) খেয়ে ফেললাম। পাশের মুরব্বি একজন বিরক্ত চোখে আমার দিকে তাকালেন।বেশী দেরি না করে তিনি বলে ফেললেন, জীবনে রানের হাড্ডি খাও নাই? কোথায় যাচ্ছে এই তরুণ সমাজ...! বিয়ে খাবে, মুরগী খাবে, গরু খাবে, খাসী খাবে,সালাদ খাবে, কোক খাবে,সবজি খাবে, ডিম খাবে,আবার হাড্ডিটাও খাবে।যুব সমাজের ক্ষিধে কি আজকাল এত বেড়ে গেছে? আমরা যুবক ছিলাম না, কি বলেন আপনারা?পাশে অন্য মুরব্বিরা স্লোগান দেয়ার মতো করে বলল, তৈ ছিলাম না নি! মুরব্বি সাপোর্ট পেয়ে আরও ক্ষিপ্র কণ্ঠে আওয়াজ তুললেন,সারাদিন ক্ষেতখামারে কাজ করে পেঁয়াজ, মরিচ ডলে ভাত খেতাম, আর এই ছেলেটাকে দ্যাখেন, মুরগীর রানের সাথে হাড্ডিটাও চিবায়! কি বেয়াদব ছেলে! পাশে মুরব্বিরা দাঁতের অভাবে শক্ত জিনিশ খেতে পারে না দ্যাখে, আমাদের ভেঙিয়ে হাড্ডি চিবিয়ে কামড়িয়ে আমাদেরকে দ্যাখায়, তার দাঁত আছে।অসভ্য কি! অন্য মুরব্বিরা গম্ভীর চোখে বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকালেন।যেন খাস ইবলিশকে দ্যাখছেন।কেও বলে উঠলেন, প্রযুক্তির অপব্যবহার। কেও বললেন, বদমাশ ছেলে! আমাদের তোমার মতো বয়সে আরও শক্ত দাঁত ছিল।দাঁত দিয়ে সুপারি টুকরা করতাম,নারকেল ছিঁড়তাম; আর উনি মুরগীর রান ছিঁড়ে হিরো হয়ে গেছেন!কেও বিরক্ত মুখে বলল, তার বাবার কানে যাওয়া উচিত।কেও একজন বলে উঠলেন, আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।হাশরের ময়দানে তার দাঁত ভেঙে দেয়া হবে। আমি দাঁত ভাঙা ভুল অপমান গায়ে মেখে আসর ছেড়ে চলে আসলাম। পেছনে একবার ফিরেও তাকালাম না।কোনও এক মুরুব্বি পেছন থেকে বলে উঠলেন, কি বেয়াদব দ্যাখলেন! রান চিবিয়ে উঠে গেছে, সালাম দিয়ে যায় নি।আরেকজন তাকে সমর্থন জানিয়ে বললেন, পাপী!
৪.
বড় ফুপার বাসায় খেতে এসেছি।আজ কোনও এক ব্যবসা সংক্রান্ত জটিলতায় তার বাসায় বহু মুরব্বির সমাগম। আমাকে মুরগীর রান খেতে দেয়া হলো।আমি হাসিমুখে খেয়ে ফেললাম। খাওয়া শেষে রানের হাড্ডিতে কামড় বসানোর আগে গতবারের আখিরাতে দাঁত ভেঙে যাবার ভয়ে চুপচাপ হাড্ডিটা না কামড়িয়েই রেখে দিলাম।মুরব্বিরা আমার দিকে তাকালেন। আমি বিজয়ের হাসি হাসলাম।একজন মুরব্বি প্রচন্ড বিরক্ত হলেন।আমার হাসিতে খুব সম্ভব তার পিত্তি জ্বলে গেছে।তিনি রেগে উঠে বললেন, বাহ, এই তাহলে যুব সমাজ...?আধুনিকতা মানে কি? নোংরামি? নষ্টা মেয়ে জাহান্নামি ছেলে...? মুরগী খেয়ে হাড্ডিটা রেখে দিয়ে কি ভাবে তারা? হাড্ডি খেলে হাত গন্ধ হবে? মর্ডাণ ছেলেমেয়েরা হাড্ডি খায় না? সেদিন আমার কলেজ পড়ুয়া মেয়েটা কি বলে জানেন?বলে,হাড্ডি আমি খাই না।আমি কি ক্ষ্যাত নাকি? শুনলেন ভায়েরা, কি বলল? আমরা ছোটবেলায় ক্ষেত খামারে কাজ করেছি, আর আজকের মর্ডাণ ছেলেমেয়েরা শব্দটাকে গালি বানিয়েছে।ইয়া মাবুদ! রহম করো!আমার দাঁত নেই,আলগা দাঁত লাগিয়েও আমি রানের হাড্ডি খাই।আর এ কি ইয়াং সমাজ! হাড্ডি খেতে গিয়ে দাঁতই ভেঙে ফেলে! অথচ আমরা দাঁত দিয়ে ডাব ছিঁড়তাম।কোথায় যাচ্ছে আমাদের যুব সমাজের দাঁত! আমরা কি এমন যুব সমাজ চেয়েছিলাম...? কি বলেন ভায়েরা? চারপাশ থেকে 'ঠিক,কথা সত্য,দারুণ বলেছেন,রহম করো আল্লাহ' স্লোগান ভেসে এল।সাপোর্ট পেয়ে মুরব্বি বলতে থাকলেন, রানের হাড্ডিতে যে কি পুষ্টি, তা কি তারা বোঝে? বুঝলে কি আর হাড্ডি না খেয়ে থাকতে পারত? আমার নাইনে পড়া মেয়েটা কোনও ভাল জিনিশকে দ্যাখে 'আলহামদুলিল্লাহ' না বলে 'জোশ' বলে! কি অদ্ভুত শব্দ! জানেন ভায়েরা...? আমার মেয়েও এই ছেলেটার মতো, রানের হাড্ডি খায় না।যার বুদ্ধি নেই,তার উপর রাগ করতেও বিবেগে বাঁধে।সেদিন আমার মেয়েটা কলেজ থেকে আসছিল বান্ধবীদের সাথে।আমার মেয়ে ছবি তুলছে, আর বাকিগুলো অসভ্য জাহান্নামীর মতো ঠোঁট বাঁকা করে ছবি তুলছে।হঠাৎ আমার মেয়েটা বলে উঠল,দোস্ত Chill! আমি শব্দটা শুনে থতমত খেয়ে জিনিশটা দ্যাখতে জানালার পাশে চুপ করে বসে রইলাম। একটা মেয়ে খুব বিশ্রীভাবে লাফিয়ে উঠল।আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল।আমি হার্টের রোগী, এই ধরনের লাফ দ্যাখে যে এখনও এখানে বসে মুরগীর রান খাচ্ছি, তার জন্য আাঠাশ রাকাত শোকরিয়া নামাজ আদায় করেছি।বলে রাখা ভাল, আমার ছোটমেয়েটাও এই ছেলেটার মতো রানের হাড্ডি খায় না।
এরপর থেকে আর কখনওই কেও কোনও অবস্থাতেই আমাকে মুরগীর রান খেতে দ্যাখে নি।
Imran Hossain Emu

এ দেশে ভাইরাল হওয়ার নিয়ম

এ দেশে ভাইরাল হওয়ার নিয়ম,
আপনি প্যান্ট খুললে ভাইরাল হবেন না, কেউ এসে গানের সাথে সাথে আপনার প্যান্ট খুললে ভাইরাল হবেন।
রাস্তায় হোচট খেয়ে কারো গায়ে লাফ দিয়ে পড়লে কিচ্ছু হবে না, কিন্তু কারো গায়ে পড়ে উল্টা তাকেই মারলে ভাইরাল হবেন।
কাউকে খুন করে আসলে ভাইরাল হবেন না। খুন করে এসে পুলিশের সাথে চা খেতে খেতে সেই গল্প বলে সেলফি তুললে ভাইরাল হবেন।
সাহায্যের অর্থ খেয়ে ভাইরাল হবেন না। সেই অর্থ সবাইকে বণ্টন করে না দিলে আপনাকে ভাইরাল করে দিবে।
ছবিতে দেহ দেখিয়ে ভাইরাল হবেন না। কিন্তু কোন সেলেব্রিটির সাথে ওই পোজে ছবি না তুললে ভাইরাল হবেন।
এমনি মজার ভিডিও করে কিচ্ছু হবে না। ভিডিও তে জামা খুলে দুলিয়ে দুলিয়ে না নাচলে আপনাকে কেউ ভাইরাল করবে না।
বেচে থাকলে ভাইরাল হবেন না কিন্তু সুইসাইড করার আগে পৃথিবীকে ঘৃণা করে স্ট্যাটাস দিন ভাইরাল হয়ে যাবেন।
শিক্ষণীয় পোস্টে কেউ মেনশন করে ভাইরাল করবে না। শিক্ষণীয় কাজ গুলো করা ছেড়ে দিন, ভাইরাল হয়ে যাবেন!!
মানুষের ভুল ধরিয়ে দিয়ে ভাইরাল হওয়ার আশা ছেড়ে দিন। নিজেই সেই ভুল করে দেখেন কিভাবে ভাইরাল হয়ে যান!!
#Hasanul_banna

গল্প: মিতুর সাথে দেখা

গল্প: মিতুর সাথে দেখা
.
.
সার্কিট হাউস পার্কের লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে একা একা হাঁটছি। দীর্ঘ ৩০মিনিট হাঁটার পর একটা মজার জিনিস খেয়াল করলাম। আমার ডান পাশের প্রত্যেকটা বেঞ্চিতে একটা করে কাপল বসে আছে। তারা খুব আমোদে গল্প করছে। কিন্তু একটা বেঞ্চ খালি। বেঞ্চটা ভীষণ নিঃসঙ্গতা অনুভব করছে। সেও চাচ্ছে তার উপরে কেউ বসুক। কেউ একজন বাদামের সাথে এক চিমটি লবন জিবে দিয়ে ঠোঁট ভাজ করতে করতে গল্প করুক। আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখছি বেঞ্চটার নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্য কোনো সঙ্গী পাই কিনা। কাউকে পেলাম না। এমন সময় অল্পবয়সী একটা ছেলে ফ্লাক্স হাতে এসে বললো, স্যার চা দিব?
কেউ স্যার বললে আমার বিব্রত লাগে। একুশ কিংবা বাইশ বৎসর বয়সী একটা ছেলেকে স্যার বলার কিছু নেই। তাদের বিনয়ের সাথে ভাইয়া বললেই বেশী খুশি হবে।
আমি বললাম, "দাও এক কাপ চা দাও। লিগার কড়া করে দিবে।" ছেলেটা চা দিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ফ্লাক্স খালি হয়ে গেছে?
- হু। সব বেচে ফেলছি।
- তাইলে চলো ঐ বেঞ্চিটাতে গিয়ে বসি।
ছেলেটা আমার কথা শুনে মোটামুটি হকচকিয়ে গেছে। তার হতচকিত ভাব দূর হতে বেশী সময় লাগলো না। সাথে সাথে আমি বললাম, যাও ৫টাকার বাদাম কিনে নিয়ে এসো। সে আমার কথামতো বাদাম কিনে নিয়ে আসলো। দুজন বসে যখন বাদাম খাচ্ছি তখন পাশের বেঞ্চগুলার কাপলরা খুব আগ্রহ নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমাদের দেখে তারা খুব মজা পাচ্ছে।
বাদাম খাওয়া শেষ না হতেই আশরাফুলের ফোন। আমি কল রিসিভ করতেই সে বলে উঠলো, রেলক্রসিংয়ে আসো। আমি ‘আচ্ছা’ বলে ফোন কেটে দিলাম। কারণ রেলক্রসিংয়ে কি দরকার তা আমি জানি, সেখানে এক অল্পবয়সী ছেলে আর এক মধ্যবয়সী লোক খুব ভালো দুধ চা বানায়। সে আমার হাতে চা ধরিয়ে দিয়ে চার তলার জানালার দিকে তাকিয়ে থাকবে। আর জানালার ওপাশ থেকে কেউ একজন রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে তার সাথে কথা বলবে। দুজনের কানেই থাকবে হেডফোন আর চোখে চোখ। এই দৃশ্যটা আমি খুব আগ্রহ নিয়ে দেখি। একবার আশরাফুলের দিকে তাকাই আরেকবার জানালার ওপাশে থাকা তরুণীর দিকে। মেয়েটার নাম বলতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু বলা যাবে না। কিছু কিছু চরিত্র সবসময় গল্পের আড়ালে থাকতে চায়। তাদেরকে আড়ালেই থাকতে দেওয়া উচিত।
.
বাদাম শেষ করে চা ওয়ালা ছেলেটি ফ্লাক্স হাতে নিয়ে বললো, ভাইয়া যাই।
কিছুক্ষণ আগে ছেলেটি আমাকে স্যার বলে ডাকছিলো। এখন হঠাৎ ভাইয়া। ছেলেটি কি মন পড়তে পারে? পারার কথা না। হয়তো একটু আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের কারণে ভাইয়া ডাকার অধিকার পেয়ে গেছে। কি অদ্ভুত বিষয়, অধিকার জিনিসটা মানুষ হুট করেই পেয়ে যায়। আপনি কাউকে ভালোবাসলে সেই মানুষটার অনুমতি ছাড়াই আপনি তাকে আপন ভাবতে শুরু করবেন। তখন মনে মনে একটা সম্পর্কও তৈরী হয়ে যাবে।
চা ওয়ালা ছেলেটা চলে যাচ্ছে এমন সময় আমি ডাক দিয়ে বললাম, - কিরে চায়ের দাম নিবি না?
- আমি শেষ চায়ের দাম নিই না। বলেই ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি নিয়ে ছেলেটি প্রস্থান করলো। আমি হাঁটতে হাঁটতে সানকিপাড়া রেলক্রসিংয়ের দিকে গেলাম। দেখি আশরাফুলের সাথে দুটি মেয়ে রেললাইন ধরে হেঁটে যাচ্ছে। আমি পিছন দিক থেকে মেয়ে দুটিকে ঠিক চিনতে পারছি না। তবে একটি যে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা "কেউ একজন" তা নিশ্চিত। এই "কেউ একজনের" একটা নাম রাখা উচিত। আচ্ছা মিমু নামে সম্বোধন করলে কেমন হয়? আমার পরিচিত একটি মেয়ে আছে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টে পড়ে। তার ধারণা আমি দোয়া করে দিয়েছিলাম বলে সে চান্স পেয়েছে। নাহলে পেত না। আমারও তাই ধারণা।
যাইহোক আমি পিছন থেকে তাদের ডাক না দিয়ে দ্রুতবেগে হেঁটে কাছে গেলাম। ঠিক পিছনে গিয়ে বললাম, মিমু কেমন আছো? মেয়েটা আমার কথা শুনে চমকে গেছে। আশরাফুলের মুখে হাসি। এই ছেলেটাকে হাসলে যে কি সুন্দর লাগে তা বলে বুঝানো যাবে না। আমি নিশ্চিত যেকোনো মেয়ে তার হাসি দেখে প্রেমে পড়ে যাবে তারপর আস্তে আস্তে নিজেকে কনট্রোল করবে। কারণ এতো সুন্দর হাসির কোনো ছেলে সিঙ্গেল থাকে না। আশরাফুলও নেই। তার মিমু আছে।
মিমু আমার দিকে ফিরে বললো,
- ওহ তাহসিন ভাই?! কেমন আছেন আপনি? আর আমাকে এভাবে চমকে না দিলেও পারতেন। চমকে দেওয়া আমি পছন্দ করি না। আমি মনে মনে বললাম, তোমার পছন্দ অপছন্দ হিসেব করবে আমার বন্ধু। আমি না। মানুষ যদি মনে মনে বলা কথাগুলো শুনতে পেত তাহলে বিরাট কেলেঙ্কারি হয়ে যেতো।
মিমু আর আশরাফুলের পাশে যে মেয়েটি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তার নাম মিতু। সেই ৬মাস আগে ট্রেনে দেখা হওয়া মিতু। মেয়েটির চোখের পলক পড়ছে না। এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বিস্ময় মাত্রাতিরিক্ত হলে মানুষের মধ্যে একধরনের ঘোর লাগা ভাব কাজ করে মিতুর অবস্থাটাও সেরকম। তার স্বাভাবিক হতে খানিক সময় লাগলো। আমি বললাম, কেমন আছো মিতু?
মিতু আমার প্রশ্ন অগ্রাহ্য করে বললো, আপনি সেদিন পালিয়ে গিয়েছিলেন কেন?
- কারণ মানুষ পালাতে ভালোবাসে।
- থাক জ্ঞানের কথা বলতে হবে না।
আশরাফুল আর মিমু অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম, চলো সবাই একসাথে রেললাইনে বসে চা খাব। হাঁটতে হাঁটতে চায়ের দোকানের কাছে আসলাম। সবাই কতো আয়োজন করে বসে চা খাচ্ছে। আমি ভাবছি অন্যকথা, কিভাবে পালানো যায়! এখান থেকে পালিয়ে গেলেও লাভ নেই। মিতু ঠিকই আমাকে খুঁজে বের করে ফেলবে। কারণ তার কাছে আছে আশরাফুল নামক সার্চ ইঞ্জিন।
.
রূপবতী মেয়েদের থেকে পালিয়ে বেড়ায় সাধু সন্ন্যাসীরা। আমি তাদের কেউ নই তবুও আমি পালিয়ে যাই। কারণ সুন্দরী মেয়েদের কাছে আছে হৃদয় ছিদ্র করার যন্ত্র।
|
চলবে...........
লেখা: Akram Hussain Tahosin

গল্প স্বপ্ন

গল্প
স্বপ্ন
চারদিকে উপচে পরা জোছনা , রেললাইনের ঠিক মাঝ বরাবর দু'পা দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে দাড়িয়ে আছি আমি, আমার সামনেই হিংস্র একটা কুকুর, কুকুরটাকে দেখে ঠিক কুকুর বলে মনে হচ্ছে না, মনে হচ্ছে ভয়ংকর কোন প্রাণী। জিহ্বা বের করে রেখেছে ওটা, মুখ থেকে ক্রমাগত লালা ঝরছে। আমার দিকে যে ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে যে কোন মুহূর্তেই সে আক্রমন করতে পারে। আশে পাসে কোন মানুষজন নেই, বহুদুর পর্যন্ত চলে যাওয়া রেললাইনের স্লিপারের উপর চাদের আলো ঠিকরে পরছে, আমার ভয় করার কথা কিন্তু ভয় পাচ্ছি না, অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। পাশাপাশি দুটো রেল লাইন, কিছুটা দূরেই একটা অচল বগি চাদের আলোর মাঝেও নিজের ভিতরটাতে অদ্ভুত এক রহস্যমময়তায় আচ্ছন্ন হয়ে অন্ধকারকে আটকে রেখেছে। ওটার দিকে তাকাতেই মনে হচ্ছে ভিতরে কিছু একটা রহস্য লুকিয়ে আছে। আমি ওদিকটাতে যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু কুকুরটা আমাকে কিছুতেই যেতে দিতে চাচ্ছে না । কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারলাম আমাকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে আরও কতোগুলো কুকুর, তারা আমাকে বৃত্তাকারে ঘিরে ধরছে, শুধু ষ্টেশনের যাওয়ার দিকটাতে একটু ফাকা,আমি চাইলে সে দিক দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারি। ষ্টেশন এ পৌছেও যে কোন সাহায্য পাওয়া যাবে না সেটা স্পটই বুঝতে পারছি তবুও কেন জানি না আমি সেদিকটাতেই দৌড়তে লাগলাম, আশ্চর্যের বিষয় আমি দৌড়ানো শুরু করার সাথে সাথেই ঝোপঝাড়ের ভিতর থেকে আরও কতো গুলো ভয়ংকর তাগড়া কুকুর বেরিয়ে এলো, তারা সবাই মিলে আমাকে ধাওয়া করতে লাগলো, আমি প্রাণপণ দৌড়াতে লাগলাম। চাদের আলোতে সব কিছু এত স্পট দেখা যাচ্ছে যে আমি খুব ভালো ভাবেই আমার গায়ের আকাশী রংয়ের শার্ট আর কালো পান্টা দেখতে পাচ্ছি। স্টেশনে কোন আলো নেই, গাঢ় অন্ধকার , তারচেয়ে বরং বাইরে খালো আকাশের নীচেই সব কিছু ভালো দেখা যাচ্ছে তবুও আমি ষ্টেশনের দিকে ছুটছি, আমি যতই দৌড়চ্ছি কুকুরের দলটাতে ততোই চারপাশ থেকে আরও অগুনিত কুকুরে এসে যোগ দিচ্ছে। ছুটতে ছুটতে আমি অনুভব করলাম আমার সাথে চাদর দিয়ে সমস্ত দেহ আবৃত্ত করে আরও একজন দৌড়াচ্ছে,আমি ঘামছি, ঘামতে ঘামতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। নিজেকে আমার নরম বিছানার মধ্যে আবিষ্কার করলাম।
ঘুম ভেঙ্গে খুব অবাক হলাম, এই স্বপ্নের মধ্যে বেশ কিছু অস্বাভাবিকতা আছে, কিন্তু সেই অস্বাভাবিকতা আমি ধরতে পারছি না , কি হতে পারে?
কিন্তু আমার ভেতরে কে যেন বলছে এই ঘটনা বাস্তব, একদিন না একদিন আমি এই ঘটনার সম্মুখীন হবো, স্বপ্নটা কতটা অদ্ভুত ছিলো জানি না কিন্তু আমার কাছে খুবই অদ্ভুত এবং ভয়ঙ্কর স্বপ্ন বলে মনে হতে লাগলো। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম।
আজ শশীর সাথে দেখা করতে গাজীপুর যাওয়ার কথা, কলাবাগান থেকে গাজীপুর যেতে আসতে সারাদিন লেগে যাবে। যতদ্রুত সম্ভব রওনা হওয়া দরকার। গামছা আর কাপড় চোপড় নিয়ে গোছলে চলে গেলাম।
নাস্তা সেরে চা খেতে খেতে মনটা কেমন যেন খচখচ করছিলো, শশীর সাথে দেখা করতে আজকেই যাওয়াটা কি ঠিক হবে? স্বপ্নটা যে করেই হোক আমার জীবনে বাস্তবায়িত হবে, আমি নিশ্চিত। কিন্তু কি করে? আজই কি?
হঠাৎ করেই আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম।
এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়তে স্বপ্নটাই আমাকে সাহায্য করলো।
গল্প
স্বপ্ন-২ পর্ব
চারু জানালার পাশে বসে এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। গ্রাম গুলোতেও এখন নিরবতা নামের জিনিসটা হারিয়ে গেছে। বাড়ির সামনে কিছুটা ফাকা জায়গা, বাবা সেখানে বাগান করেছেন , বাগানটার পাশ ঘেষেই চলে গেছে একটা পাকা রাস্তা, ক্রমাগত সেখান থেকে একটার পর একটা ট্যাম্পু রিক্সা ছুটে চলেছে। চারুর শব্দ ভালো লাগে না,তার নিজের মাথার মধ্যেই কতগুলো লোক সব সময় কথা বলে, চারুর মনে হয় মানুষ গুলো যেন তাকে সব সময় চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে। তাকে নিয়ে উপহাস করছে, হাসছে সবাই, চারু তার চারপাশে হাসির শব্দ শুনতে পায়, উপহাসের হাসি! লোকগুলো সব সময়ই তাকে নিয়ে কথা বলতে থাকে, চারু তাই নিজে কথা বলে না, ঝিম মেরে থেকে ওদের কথা শোনে আর হাতের কাছে শক্ত কিছু পেলে ওদের উদ্দেশ্য সেগুলো শূন্যে ছুড়ে মারে। বাইরের শব্দ তাই চারুর সহ্য হয় না, মনে হয় বাইরে থেকে শব্দ আসলে ও আশেপাশের লোকগুলোর কথা শুনতে পাবে না, তখন ওরা চারুর নামে যা খুশি তাই বলে ফেলবে, কিন্তু চারু ওদের কে তার নামে আজেবাজে কথা বলতে দিবে না, কিছুতেই না । শব্দ শুনলেই তাই চারুর মাথার ভিতরের পোকাটা নড়েচড়ে ওঠে, ইচ্ছে সব কিছু তছনছ করে দিতে । রাগে ক্ষোভে নিজেকে এবং সেই সাথে আশেপাশের সব কিছুকে ছিঁড়েখুঁড়ে তছনছ করে ফেলতে ইচ্ছে করে। চারুর তখন মাথা ঠিক থাকে না, হাতের কাছে যা পায় সব ছুড়ে মারে, মোটামুটি এই ঘরের সব কিছু ভাঙ্গা হয়ে গেছে অবশিষ্ট বলতে কিছুই নেই। দরজাটা সব সময় বাইরে থেকে তালা লাগানো থাকে। খাবারের সময় হলে মা শুধু দরজা খুলে খাবার দিয়ে যায়, চারু সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। মাকে খামছে দিয়ে, কিল ঘুষি দিয়ে আহত করে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে চায়। চিৎকার করে বলে - তোমরা আমাকে পাগল ভেবেছো? আমি পাগল? আমি পাগল? অপূর্বকে আমার কাছে এনে দাও, আমি ওকে নিজ হাতে খুন করবো, অপূর্বকে খুন করবো আমি।
কলাবাগান থেকে গাজীপুর পৌঁছতে পৌঁছতে বেলা প্রায় একটা বেজে যায় । নিজে গাড়ি চালিয়ে এসেছি , শশীর সাথে আজ অনেক দিনপর দেখা হবে, নানান ঝামেলায় এতদিন ওর সাথে দেখা করার সময় হয়নি । আজ প্রায় একমাস হয়ে গেলো শশীকে দেখি না ।আমার এই বন্ধুর বাসায় আগে মাঝে মাঝেই শশীর সাথে দেখা করতে আসতাম । শশীকে কি ভাবে ভালোবেসে ফেলেছি, অথবা এটা আসলেই ভালোবাসা কি না? এখনও সন্দেহ আছে অামার মনে, তবুও শশীকে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না আমার , প্রচন্ড আকর্ষন অনুভব করি। এই তীব্র আকর্ষণ আমাকে আজ এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে।
গাড়িটা পার্ক করে নিয়াজের বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিং বেল চেপে দম বন্ধ করে দাড়িয়ে আছি , শশী যখন দরজা খুলে সামনে এসে দাড়ালো আমার মনে হলো আসলেই আমার সামনে চাঁদ ঝলমল করে উঠলো।
নিয়াজ বাসায় নেই ওর স্ত্রীও নিজের অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরেছে। দরজাটা বন্ধ করে সোজা সোফায় গিয়ে বসলাম , শশী তার ঝলমলে সৌন্দর্য আর শরীরের মনমাতানো ঘ্রাণ ছড়িয়ে দিয়ে আমার খুব কাছে এসে সোফার একটা হাতলে আলতো করে বসে খুব আদুরে কন্ঠে জানতে চায় -অপূর্ব, চা কফি কিছু খাবে? আমি বানিয়ে আনি?
শশীকে দেখলেই আমি আগের মতোই মাতাল হই, ওকে দেখলে কেউ বলবে না তার দুটি সন্তান আছে। সৌন্দর্য আর শরীরের গড়ন এমন ভাবে চর্চার মাঝে ধরে রেখেছে সে যে যেকোন পুরুষেরই শশীকে দেখলে শরীরে আগুন ধরে যাবে, আর সেই আগুনে ঘি ঢালতেও শশী খুব ওস্তাদ।
শশীর স্বামী বিদেশে থাকে , স্ত্রীকে দেওয়ার সময় মতো কোথায় তার? আর শশীও জানে তার চাহিদা কি ভাবে পূরণ করে নিতে হয়।
অপূর্বকে প্রথম দেখাতেই মনে ধরেছে শশীর। সুন্দর সুঠাম দেহ, লম্বা,ফর্সা । শশীর বোধ হয় এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার নেই। আজ এতদিন পর অপূর্বকে কাছে পেয়ে শশী তাকে আরও ঘনিষ্ঠ ভাবে পেতে চাইল।
আমি শশীর দিকে তাকিয়ে বললাম - চলো আজকে তোমাকে আমার ফ্লাটে নিয়ে যাবো।
শশী সত্যই খুব অবাক হলো, আসলেই অপূর্ব তাকে নিজের ফ্লাটে নিয়ে যেতে চায়, অদ্ভুত তো!
লম্বা পথে যেতে যেতে শশীর সাথে আমার খুব একটা কথা বলতে ইচ্ছে হলো না , নিজের মধ্যই কিছু একটা হিসেব মেলাতে ব্যস্ত এখন আমি।
শশীকে খুব উৎফুল্ল মনে হয়, তার এতো দিনের স্বপ্ন আজ পূরণ হতে যাচ্ছে, চারুর সাজানো সংসারটা এবার বোধ হয় তার নিজের দখলে চলে আসবে, চারু শশীর বান্ধবী। কেন যেন শশীর সব সময়ই চারুর সুখ দেখলে হিংসে হতো। চারুর বিয়ের আসরে শশী যখন প্রথম অপূর্বকে দেখে, মনে মনে হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরেছিলো সে। চারুর বর যেমন দেখতে সুন্দর তেমনই শিক্ষা অর্থে বিত্তে সব দিক দিয়েই সেরা।
নিজের ভাগ্যের সাথে চারুর ভাগ্যকে মিলিয়ে কোন ভাবেই নিজেকে বিজয়ী মনে হয় নি শশীর।
শশীর বর শশীর চেয়ে বয়সে অনেক বড়, শুধু মাত্র সুন্দরি বলেই শশীকে তার বউ করে নিয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু শশীর চাহিদা গুলো পূরণ হয় নি সেখানে। আর স্বামী দূরে দূরে থাকায় নানা রকম পরিস্থিতি সামলাতে সামলাতে শশী নিজেও অন্য রকম হয়ে গেছে । নিজের চাহিদা গুলো পূরণ করার জন্য যে কোন কিছু করতেই শশীর আত্মসম্মানে বাধে না এখন আর। প্রথম দেখাতেই যখন অপূর্বকে মনে ধরেছিলো তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলো শশী যে করেই হোক অপূর্বকে তার চাই ই চাই।
নিজের সুখ স্বপ্নে বিভোর শশীর ধারনাই ছিল না আজ তার জীবনে কি ঘটতে যাচ্ছে। অন্যের ঘরে আগুন দিলে তার আঁচ যে নিজের গায়েও লাগে শশীর তা জানা ছিলো না।
গল্প
স্বপ্ন-শেষ পর্ব
চারুর সাথে আমার প্রথম দেখা হয় চারুকলায়, ওর ছবির প্রদর্শনী চলছিলো, আমি আমার চারুকলার এক বন্ধু রনির সাথে ওখানে গিয়েছিলাম,চারু রনির বন্ধু। এক আড্ডায় রনি, চারু ও আরও কয়েক জনের সাথে আমিও ছিলম , মুগ্ধ চোখে চারুকে দেখছিলাম।
এরপর যখনই সুযোগ পেতাম রনিকে খুজতে চারুকলায় চলে যেতাম, আসলে রনি তো ছিলো বাহানা, চারুই ছিলো আমার আসল উদ্দেশ্য। যতই চারুকে দেখেছি ততোই মুগ্ধ হয়েছি, ওর মত মেয়ের আমাকে ভালোবাসার কথা না, অন্য জগতের মানুষ চারু।
আমি চারুকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলাম। চারুকে পারিবারিক ভাবে বিয়ে করতে আমার খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয় নি।
চারুর প্রতি আমার ভালোবাসাটা অন্য রকম, সেখানে চোখ ধাধানো কোন ব্যাপার নেই।
কিন্তু শশীর প্রতি কি করে যে আমি এত দুর্বল হয়ে পরলাম জানি না। শশী চারুর খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। প্রায়ই আমাদের বাসায় বেড়াতে আসতো। আমি, শশী আর চারু তিন জনে মিলে আড্ডা দিতাম রাতভর। কথা কথার গায়ের উপর হেসে গড়িয়ে পরা, চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে আঙ্গুলে ছুয়ে দেওয়া, শশীর চোখের মোহিনীশক্তিতে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলাম ক্রমশ। একটা বিষয়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো যে, আমাদের মাঝে যা-ই ঘটুক না কেন চারু সেগুলো কখনই বুঝতে পারবে না, কারন চারু সব সময়ই ছিলো আত্মভোলা, ছবি আকা নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতো সে, কতদিন এমন হয়েছে যে, শশী আর আমাকে একসাথে গল্প করতে রেখে মাঝ রাতেও সে চলে গেছে তার অসম্পূর্ণ ছবিটা শেষ করতে,আর এই সুযোগে আমি আর শশী নতুন করে ছবি একেছি আমাদের কামনা বাসনার, অনৈতিক আকাঙ্ক্ষার। ঘন্টা খানেক পরে ফিরে এসেও আমাকে আর শশীকে খুব কাছাকাছি গল্পে মশগুল থাকতে দেখেও চারুর মনে একবারও কোন সন্দেহ জাগে নি বরং হাতে করে তিন কাপ চা নিয়ে এসে হাসি মুখে আবার আড্ডায় যোগ দিয়েছে সে।
সব কিছু ভালোই চলছিলো। একদিকে চারুর গভীর ভালোবাসা, সুন্দর করে সাজানো গোছানো সংসার, চারু ফ্লাটটাকে সাজিয়ে ছিলো তার মনের মাধুরী দিয়ে,সব জায়গাতেই চারুর সুন্দর রুচির ছাপ ছড়িয়ে ছিলো, সে তার ভালবাসা আর স্বপ্ন দিয়ে সাজিয়ে ছিলো আমাদের বিশাল বড় ফ্লাটটা। একদিকে চারুর নির্মল ভালোবাসা অন্য দিকে শশীর জন্য আমার মনের মাদকতা। কোন চাহিদা পূর্ণ হতেই কোথাও কোন বাধা ছিলো না, যখন তখন শশী চলে আসতো আমাদের বাসায়, হয়তো চারু বাসায় নেই ছুটির দিনে ঝিম দুপুরে আমি তখন বিছানায় শুয়ে আরামে গা এলিয়ে দিয়েছি শশী তখন উড়ে এসে হাজির, ব্যবসার কাজে দূরে কোথাও যাওয়ার কথা বলে শশীকে নিয়ে আশেপাশের রিসোর্ট গুলোতে দুতিনদিন কাটিয়ে ফিরে আসতাম ফুরফুরে মেজাজে। আমি জানতাম এসব বোঝার মতো মন চারুর কখনই হবে না, এতো সুক্ষ বুদ্ধি চারুর নেই।
কিন্তু এক পর্যায়ে এসে সমস্যা বাধলো, সমস্যার শুরু হলো তখন যখন চারুর এক খালা জরুরি দরকারে আমাদের কাছে এসে কিছুদিনের জন্য থাকা শুরু করলেন। তিনি শশীর যখন তখন আমাদের বাসায় আসা, রাতে থেকে যাওয়া, সারারাত আড্ডা দেওয়া এসব কিছু ভালো নজরে দেখলেন না। আমি দেরীতে বাসায় ফিরলে তিনি নানান প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। কথায় বলে না সূর্যের চেয়ে বালি গরম,বিষয়টা অনেকটা তেমন হয়ে দাড়ালো।
আমি বুঝলাম চারুর মনে ধীরে ধীরে সন্দেহ বাড়ছে, সেও বিষয় গুলোকে এখন আর সহজ ভাবে নিচ্ছে না।
শশীকে নিয়ে একবার সিলেটে এক রিসোর্টে গেলাম। সেখানে চারুর কোন স্কূলের বন্ধু কর্তব্যরত ছিলো। আমি তাকে চিনতে পারি নি, শশীও চিনতো না। সে ছিলো চারুর স্কূল জীবনের বন্ধু, ফেসবুকে সে চারুর সাথে আমার ছবি দেখেছিলো। কোন এক ফাকে আমার আর শশীর অন্তরঙ্গ কিছু ছবি তুলে ইনবক্সে পাঠিয়ে দিয়েছিলো সে চারুকে । সিলেট থেকে ফিরে আসার পর চারুকে দেখলাম উন্মাদের মতো। সে আর আগের মতো নেই, সব কিছু নিয়ে খুব ঝামেলা বেধে গেল, অনেক কষ্টে হাজারবার ক্ষমা চেয়ে, শশীর সাথে আর কখনও যোগাযোগ রাখবো না প্রতিজ্ঞা করে সে যাত্রায় রক্ষে পেলাম।
কিন্তু পাপে যাকে একবার ধরে তাকে কি আর সহজে ছাড়ে? শশীও আমাকে ছাড়তে চাইলো না। জীবনে সে অনেক পুরুষেরর ভালোবাসা পেয়েছে কিন্তু আমার মতো করে সে না কি কাউকেই ভালোবাসে নি, আমাকে সে না - কি কোনদিন ভুলতে পারবে না। কতোদিন দূরে দূরে থাকার পর আমরা আবারও কাছে এলাম।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে শশীকে আমার আর ভালোলাগছিলো না, ওর প্রতি আকর্ষণ আমার চাহিদাগুলো পূরণ হওয়ার সাথে সাথেই ক্রমশ কমে আসছিলো।
আর এক্ষেত্রে শশীর বেলায় হচ্ছিলো ঠিক তার উল্টো। আমি যতোই এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছিলাম শশী ততোই আমাকে চোরাবালির মতো টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো আরও অতল গহ্বরে।
এত কিছুর মাঝে চারু ভালোবাসা না বাসার দোটানায় দুলতে দুলতে আমার কাছে কখনও আসতো আবার কখনও ছিটকে দূরে সরে যেতো। আমাদের সম্পর্কটা আর কিছুতেই আগের মতো হচ্ছিলো না, তবুও একদিন আমাদের জীবনে সেই সুসংবাদ এলো, যে সংবাদ শোনার জন্য আমি আর চারু উন্মুখ হয়ে ছিলাম। আমরা জানলাম আমাদের সংসারে আসছে কোমল ছোট দুটি হাতের ছোট একটা পুতুল। আমি নিজেকে বদলে ফেলতে চাইলাম কিন্তু শশী কোন মতেই তা হতে দিচ্ছিলো, সিলেটের ঘটনা জানার পর শশীর আমাদের ফ্লাটে আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো চিরদিনের জন্য । কিন্তু এরই ফাকে আমি যে কয়বার শশীর সাথে দেখা করেছি সব কিছু সে চারুকে নিজে জানালো এবং চারুকে বললো আমি শশীকে ভালোবাসি চারু যেন শশীর আর আমার জীবন থেকে দূরে সরে যায়।
এই ঘটনার পর চারু আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে, আমি চারুকে বাচাতে পারলেও আমাদের অনাগত সন্তানকে বাচাতে পারিনি। চারু গত একমাস ধরে তার বাবা মার কাছে আছে। আমাকে সে চিনতে চায় না, সে এখন আমার অচেনা।
ভুল গুলো সব আমার। তাই আমি নিজেই সেই ভুলের সংশোধন করবো।
আজ শশী খুব খুশি, আমার জীবন থেকে চারু নামটা দূরে চলে গেছে, সব কিছু তার দখলে।
কলাবাগানের ফ্লাটে পৌঁছতে পৌছতে রাত দশটা বেজে গেল।পথে দোকানে থেমে আমি কিছু লবন, ব্লিচিং পাউডার আর কস্টেপ কিনলাম। শশীকে নিয়ে বাইরে রেস্টুরেন্ট থেকেই রাতের খাবার সেরে এসেছি। শশী রেস্টুরেন্টে খাওয়া, ছুটির দিন হলে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, দামি দামি উপহার পেতে খুব পছন্দ করে। শশীর গত জন্মদিনে ওকে কিনে দেওয়া ডায়মন্ডের দুলটা এখনও ওর দু'কানে চিকচিক করছে। ওকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে, যে কোন পুরুষ ওকে দেখে মুগ্ধ হয়, কিন্তু মুগ্ধতা দিয়ে কি জীবন চলে?
একবার ডেঙ্গু হয়ে আমি হাসপাতালে বিছানায় যখন পরে ছিলাম তখন দেখেছি চারুর চোখে সে কি আকুলতা! শুধু উত্তল উন্মাদনা দিয়ে কি জীবন চলে? চলে না।
শশী সমস্ত ফ্লাটে ঘুরে ঘুরে বেরিয়েছে এতক্ষণ,কিছুক্ষণ আগে আমি নিজ হাতে রান্না ঘরে গিয়ে চারুর আড়ং থেকে কেনা শখের চায়ের কাপে করে চা বানিয়ে এনে দুজনে মিলে চা খেয়েছি।
চারুর ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে নিজেকে রাতে শোবার আগে শেষ বারের মতো দেখে নিয়ে শশী (চারুর) আমাদের শোবার ঘরের বিছানাটায়, চারুর বিছানায় কি নিশ্চিন্তে আমার কোলে মাথা রেখে গা এলিয়ে দিলো। খুব বেশি সময় লাগলো না শশীর অতল ঘুমে তলিয়ে যেতে। চারদিকে শুনশান নিরাবতা, দূরে একটা কুকুর একটু পর পর সেই নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে ডেকে উঠছে, দুএকটা গাড়ি মাঝ রাতে ঘরে ফিরছে। আমি শশীর দেহটা কোলে তুলে নিয়ে যাই লাগোয়া বাথরুমটায়, সেখানে আগে থেকেই একটা বড় ড্রাম এনে রেখেছিলাম, কয়েকদিন আগে ওটা স্টোর রুমে খুজে পেয়েছি। শশীর শরীরটা ছিপছিপে, একতিল মেদ নেই, আমি ওর দেহটা অনায়াসে ড্রামের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলি, একটা ধারালো ছুরি ওর গলায় ছুইয়ে একটা টান দিতেই ফিনকি দিয়ো রক্ত ছুটতে থাকে। শশীর শরীরের উপরে ইচ্ছে মতো লবন আর ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিতে থাকি, যেন খুব দ্রুত ওর শরীরটা পচন ধরে কিন্তু ব্লিচিং পাউডারের কারনে গন্ধ না ছড়ায় , তারপর ড্রামের মুখটা লাগিয়ে ভালোভাবে বন্ধ করে দিয়ে কস্টেপ দিয়ে মুখটা পেঁচিয়ে আটকে দেই যেন বাতাস চলাচল করতে না পারে। সব কাজ শেষ হলে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে বাথটাবে গা ভিজিয়ে আরাম করে গোসল শেষ করে শুতে যাই।
কাল আমার ফ্লাইট। চলে যাবো দূরে কোথাও, তারপর সেখান থেকে অন্য কোন দেশে, সেখান থেকে অন্য কোথাও। নিজের থেকে পালিয়ে যাবো দূরে বহু দূরে...
বেশ কিছুদিন পর চারুদের ফোনটা বেজে ওঠে, চারুর মা আফরোজা বেগম ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে অপূর্বর গলা পাওয়া যায় - মা আমি অপূর্ব। চারুকে বলবেন ওর শোবার ঘরের লাগোয়া বাথরুমে শশীর মৃতদেহ বড় একটা ড্রামের মধ্যে রেখে এসেছি, ও যেন শশীর বাবা মাকে খবর দেয়, তারা যেয়ে মৃতদেহটা উদ্ধার করুক।
চারুর কানে যখন খবরটা পৌছায় এসব কিছু বোঝার ক্ষমতা তখন তার অবশিষ্ট নেই।
বেশ কয়েক বছর পর চারুর যত্নে সাজানো ফ্লাটটা ভাড়া নিতে আসেন ডালিয়া, বাসাটা তার খুব পছন্দ হয়, এত সুন্দর ফ্লাট, এমন সাজানো গোছানো, কেন যে এত বছর অব্যবহৃত অবস্থায় পরে ছিলো কে জানে? ডালিয়া ফ্লাটটা ভাড়া নিয়ে খুব খুশি হন, এত কম ভাড়ায় কলাবাগানে এমন একটা ফ্লাট পেয়ে যাবেন ভাবতেই পারেন নি তিনি। কিন্তু ফ্লাটে ওঠার দুই মাসের মাথায় তিনি ফ্লাট ছেড়ে চলে যান।
সত্যিই চারুর সাজানো সংসারটা বোধ হয় এতদিনে শশী নিজের করে পেলো।

বিয়েনামা

Written By: Asif Mahmud
(১)
-কাল সকালে রেডি থাকিস, মেয়ে দেখতে যেতে হবে।
মা এসে আমার রূমে রিমাইন্ডার দিচ্ছেন। এ নিয়ে চারবার হয়ে গেছে। মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রাখলে স্টপ না করে স্নুজ বাটনে ক্লিক করলে যেমন একটু পরপর আবার বেজে উঠে, মা-ও ঠিক তেমন আচরণ করছেন।
-হ্যাঁ ঠিক আছে। আপনি যান, আমি রেডি থাকব ইনশাআল্লাহ।
-এত রাত হয়ে গেল, এখনো ঘুমাইলি না, সকালে উঠে তো ঢুলবি ঘুমে।
মায়েদের এই এক ডায়লগ, এ জীবনে কতবার যে শুনেছি হিসেব নেই। অবশ্য আমি বাবা থেকেও বহুবার এই কথাটিই শুনেছি। বাবার ধারণা আমি যেহেতু রাতে দেরিতে ঘুমাই, সেহেতু আমি ভার্সিটি গিয়ে ক্লাসে ঘুমে টলতে থাকি, কিংবা ঘুমিয়েই পড়ি। বাবার ধারণা অবশ্য আংশিক সত্য। আমি অনেকদিন ই চেয়ারম্যান স্যারের সেমিকন্ডাকটর ক্লাসে ঢুলু ঢুলু ভাব নিয়ে ক্লাস করেছি। অনেকদিন ক্লাস মিস ও করেছি। তাই বড়দের কথা যে একেবারে ফেলনা নয় তাও কিন্তু ঠিক, কিন্তু তবুও যখন বলে তখন রাগ লাগে। সত্য কথা তেতো কিনা।
-আরে আমি উঠতে পারব আপনি গিয়ে ঘুমান।
-আমি তোর মশারি টাঙ্গিয়ে দিয়ে যাচ্ছি, কাঁথা আরেকটা লাগলে বলিস, ঠাণ্ডা আছে এখানে অনেক। আর কয়েল দিব?
মশারি দেয়ার পরও কয়েলের প্রয়োজনীয়তা টা কি আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।
-আপনি এক কাজ করেন, আপনি গিয়ে শুয়ে পড়েন। কিছু করা লাগবে না এখন আর। আমি শুয়ে যাব।
মায়ের মুখ দেখে মনে হল আমি মশারি ভালমত বিছানার চারপাশে খুঁচে, কাঁথা মুড়ি দিয়ে উনাকে গুড নাইট বলা পর্যন্ত উনি যাবেন না। অগত্যা বসা থেকে উঠে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
-গুড নাইট বলতে হবে?
শুনে মা হাসতে হাসতে চলে গেলেন, আর আমি বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিতে গিয়ে দেখি ফোন নেই। মায়ের কারসাজি বুঝতে আর বাকি রইল না। মা ভালমতই জানে আমি ফোন পাশে থাকলে সহজে ঘুমুব না, তাই আগে ভাগেই ফোন সরিয়ে ফেলেছে। মায়ের উপর রাগের পাশাপাশি একটা স্নেহমিশ্রিত অনুভূতি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
(২)
সকালে মায়ের চিৎকার চেঁচামেচি তে ঘুম ভেঙে গেল।
-কয়টা বাজছে তোর কোন খবর আছে? মানুষ কেমনে দশটা পর্যন্ত ঘুমায়! দুনিয়ার মানুষ ঘুম থেকে উঠে অর্ধেক কাজকর্ম শেষ করে ফেলেছে।
মায়ের কথা শুনে ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম। নিজেকেই নিজে বিশ্বাস হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে পাঁচ-ছ মিনিট আগে ফজর পড়ে শুয়েছি। এর মধ্যে দশটা বেজে গেছে! চোখ ডলতে ডলতে ডাইনিং ক্রস করে বেসিনের দিকে যাচ্ছিলাম, তখনি চোখ পড়ল ঘড়িটায়। আটটা বেজে তিন মিনিট। মা জাতির উপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেল। হায়রে মা! ইচ্ছে করছিল ডাইনিং এই শুয়ে পড়ি, এত স্বাধের ঘুম আমার! যাহোক, বেসিনে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে বসলাম। নাস্তার টেবিলে বাবা বেশ গম্ভীর হয়ে বসা। বোঝাই যাচ্ছে আমাকে বেশ কিছু নতুন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অবগত করা হবে। আমি ও বেশ গম্ভীর হয়ে বসে আছি। বাবা গলা খাঁকারি দিলেন। এবার তাঁর স্পিচ শুরু হবে।
-আমরা যাচ্ছি ৬-৭ জন, সেহেতু আমরা বোধহয় একটা গাড়ি নিলে ভাল হয়।
-কি গাড়ি?
-একটা ট্যাক্সি হইলে ভাল হয়।
-ট্যাক্সি কই পাবেন, এখন তো সব সিএনজি।
বাবা আমার দিকে গুলি করে ছাই করে দেয়ার লুক দিলেন, আমি চুপসে গেলাম।
-তোর জামা-কাপড় রেডি আছে?
-আমি শার্ট পড়ে যাবো নাকি পাঞ্জাবি?
-তোর এখনো সেটাও ঠিক নেই? একটা অকেশন, অথচ কোন প্রস্তুতি নাই?
অথচ আমি বাবাকে প্রশ্ন করেছি, আমি শার্ট পড়ব নাকি পাঞ্জাবি, তিনি উত্তরে আমাকে এক দফা শাসিয়ে দিলেন। এটা বাবাদের স্বভাবগত আচরণ। আমি কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেতে লাগলাম। বাবা আবার শুরু করলেন।
-মেয়ের তো কেউ মুখ দেখতে পারল না, শেলীরেও পাঠালাম অন্যভাবে একটু চেহার টেহারা দেখা যায় কিনা, কিন্তু সেটাও হল না। একবার কোনভাবে চেহারা দেখতে পারলে আগানো টা ভাল ছিল। এখন হুট করে দেখতে যাওয়া মানে ওয়ান ফুট ফরোয়ার্ড হয়ে যাওয়া।
বলেই বাবা আমার দিকে তাকালেন। বোধহয় আমার থেকে কিছু শোনার অপেক্ষা করছেন।
-চেহারা দেখে কি হবে? আদার সাইড তো ঠিক আছে। মেয়ে পর্দা-টর্দা করে, পড়াশুনাও আছে, ফ্যামিলিও ভাল।
বাবা আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন।
-চেহারা দিয়ে কি হবে মানে? চেহারাই তো আসল। ফেইসের সাথে অনেক কিছু রিলেটেড। আমার প্রথম ছেলের বিয়ে, মেয়ে সুন্দর কি অসুন্দর দেখব না?
বাবা এবার কিছুটা উত্তেজিত। আমি কিছু বললাম না। চুপচাপ খেতে লাগলাম। বাবা এবার নিজেকেই নিজে শান্ত্বনা দিতে লাগলেন।
-ঠিক আছে, যে বিয়ে করবে, তার সমস্যা না থাকলে আমার আর কি বলার আছে?
-বাবা। বিয়ে করছিনা এখনো। আজ কেবল দেখতে যাচ্ছি। আপনাদের পছন্দ ছাড়া বিয়ে করব বলে তো বলিনি।
বাবা বোধহয় কিছুটা কনভিন্সড হলেন এ কথায়। খাওয়ার পর গোসল সেরে রুমে আসার পর মা কোত্থেকে একটা শেভিং মেশিন নিয়ে আসলেন।
-এটা কিসের জন্য?
-দাঁড়ি ছোট কর একটু। এত লম্বা রাখলে কেমন দেখা যায়। জামাইকে জামাইর বাপ মনে করবে বুঝেছিস?
-তাতে কি? আমি তো গিয়ে বলবই ছেলে আমি ই।
-আহারে, তারপরও একটা মানানসই আছে না?
-মা, তোমার এই কাহিনী সেই অনেক আগে থেকে শুনছি। তারা আমার এই দাঁড়ি সমেত আমাকে পছন্দ করলে করবে নয়ত না।
-ঠিক আছে, যা ভাল বুঝিস।
মা একটু মুখ গোমরা মত করলেন। আমি আজ পর্যন্ত নিজে নিজের লুক নিয়ে যতটা না চিন্তিত তার চেয়ে বেশি চিন্তিত আমার মা। ছোটবেলা থেকে আমাকে জিন্সে ভাল ধরবে, শার্ট ইন করলে ভাল লাগবে, হাতে একটা ঘড়ি হলে জম্পেশ হবে এসব থিওরি আমার মায়ের। কিন্তু বরাবরই আমার পছন্দ তাঁর উলটো। তাই মায়ের এই গোমরা মুখ টা দেখে অভ্যাস হয়ে গেছে।
-আচ্ছা শোন, মেয়ের সাথে কথা বলে দেখবি বুঝছিস? ওখানে গিয়ে বোবা হয়ে যাইস না।
-জ্বি বলব।
-আর হ্যাঁ, মেয়ের হাঁটাচলা খেয়াল করবি, কোন দোষ-টোষ আছে কিনা। রোগা মেয়ে না গছিয়ে দেয়।
-মা, আমি নিজের জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি, গরু কিনতে যাচ্ছি না। কি বলছ এসব?
-তর্ক করিস না, বিয়েতে এসব দেখতে হয়। রোগা মেয়ে বিয়ে করবি নাকি?
-আচ্ছা ধরো, মেয়ের কোন রোগ উপর থেকে যেসব চোখে পড়েনা, এরকম কিছু থাকলে? কিংবা আমার থাকলে? আমারো তো থাকতে পারে, আমিও তো জানিনা। তাহলে এটা গছানো কিভাবে হল। এত কিছু ভাবলে হয়?
মা, কি যেন ভাবলেন অনেকক্ষণ। তারপর চলে গেলেন।
আমি রেডি হয়ে রুম থেকে বের হওয়ার পর বাবা-মা একযোগে আমার দিকে সূক্ষ্মভাবে দৃষ্টিপাত করতে লাগলেন। বাবা-মায়ের চেহারার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে তাঁরা অন্য কিছু বলতে চাইছেন। মা ভেতরের দিকে চলে গেলেন। বাবা আমার কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন,
-তোর কোন অসুখ-টসুখ আছে নাকি রে?
এবার আমার মেজাজ টা গেল তিরিক্ষ্মি হয়ে। চিৎকার করে মা কে ডাক দিলাম, মা দৌড়ে এলেন।
-আপনারা আসলেই অতিরিক্ত করে ফেলছেন। বিয়ের নিকুচি করি, আমি কাল ই ঢাকায় চলে যাচ্ছি।
বলেই পাঞ্জাবি খুলে ফেললাম। এরপর রুমে চলে এলাম। মা এসে আমার পিঠে মালিশ করতে লাগলেন।
-চল বাবা, রেডি হয়ে নে। আর পাঞ্জাবি টা খুলছিস ভাল হয়েছে, ডিপ কালারে ভাল দেখাচ্ছে না। লাইট কোন কালার থাকলে সেটা পর।
অগত্যা হলুদ আর সবুজের মিশ্রিত একটা রঙের পাঞ্জাবি পড়ে আমি, বাবা, দুই কাকা আর এক মামাকে নিয়ে একটা সিএনজি ভাড়া করে আমার হবু শ্বশুর বাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম। মা কে সাথে নিলে ভাল হত। মাকে ছাড়া একটা টিশার্ট কখনো পছন্দ করতে পারলাম না, বউ কি পছন্দ করব! কিন্তু মা কেন জানি যেতে চাইলেন না। সিএনজি আনুমানিক আমাদের বাজার পর্যন্ত পৌঁছালে আমি বাবাকে বললাম,
-বাবা, একটা কার নিলে ভাল হত না?
-বিয়ে করতে যাচ্ছিস নাকি যে কার নিবি?
-না মানে, একটা পার্সোনালিটির ব্যাপার আছে না। ভাল চাকরিবাকরি করি হিসেবে, একেবারে একটা সিএনজি নিয়ে গেলে কেমন দেখায় বিষয়টা।
বাবা আমার কথায় কিছুটা কনভিন্সড হলেন। বাজারে নেমে একটা কার ভাড়া নিলাম আমরা। কারে বসে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছিলাম, যাক একটা পার্সোনালিটি সম্পন্ন এন্ট্রি হবে ঐ বাড়িতে। কিন্তু আমার পাঞ্জাবির কালার নিয়ে আমি মোটেও সন্তুষ্ট ছিলাম না। মনের মধ্যে খুতখুত ভাব হচ্ছিল, “যাহ! বাজে দেখাচ্ছে!”
(৩)
কারে চড়ে মেয়ের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে সর্বোচ্চ দশ মিনিট সময় লাগল, এর মধ্যেই বাবা ঘুমিয়ে পড়েছেন। সবাই মিলে ঝাঁকুনি প্রয়োগ করে বাবাকে উঠাতে হল। এবার গাড়ি থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে ইতস্তত করতে লাগলাম। সবাই বের হয়ে যাওয়ার পর জানালা দিয়ে মুখে বের করে আব্বুকে জিজ্ঞেস করলাম, “আব্বু, আমি কি এখন বের হব?”
-তো কি আমরা মেয়ে দেখে চলে যাব?
বাবার উত্তরে লজ্জা পেয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলাম। এদিকে ওদিক থেকে ও বাড়ির লোকজন আমাদের রিসিভ করতে এগিয়ে এল। সবাই এসে হাত মিলিয়ে মোবারকবাদ জানাল। এরপর আমাদের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হল। সবাই একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আমি লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। এক হাজার দর্শকের সামনে মাইক হাতে স্টেজে দাঁড়িয়ে থাকার মত ব্যাপার এটা খানিকটা। একেকজন একেকরকম প্রশ্ন করতে লাগল। সবার প্রশ্নের ডাইমেনশন অনেকটা একই রকম ছিল, আর সবাইকে দেখতে একইরকম বয়স্ক দেখাচ্ছিল, ফলে আমি মেয়ের বাবা নির্ধারণ করতে অসমর্থ হলাম। এটা আমার আজীবনের ব্যর্থতা। একবার বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে বন্ধুর ভায়রা কে তার শ্বশুর ভেবে বেশ খাতিরযত্ন করে শেষমেশ বন্ধুকে এসে বললাম, “তোর শ্বশুরের বেশ খাতিরযত্ন করলাম আজ”
“মানে? আমার তো শ্বশুর বেঁচেই নেই”
সেই দিনের পর থেকে আমি আর কখনো কারো শ্বশুর কে খাতির যত্ন করতে যাইনি।
-বাবা, তো তোমার পরবর্তী প্ল্যান কি? পড়ালেখা বা চাকরির ব্যাপারে?
অবশেষে আমি মেয়ের বাবা খুঁজে পেতে সক্ষম হলাম। তাঁর এই প্রশ্নে আমি সহজ সরল উত্তর দিলাম।
-এর চেয়ে ভাল স্যালারির কোন চাকরি খোঁজার ইচ্ছে আছে আপাতত।
লোকটা পড়ালেখার ব্যাপারে কেন জানতে চাইল বুঝতে পারলাম না। এমএসসি পাশ করেছি, আর কত পড়ব, চাকরি করছি, বিয়ে করতে এসেছ্ বিয়ে শাদি করে সংসার এই তো জীবন। আর কি! তবে তিনি আমার উত্তরে যথেষ্ট সন্তুষ্ট হতে পারলেন বলে মনে হয়না। তার চেয়ে বোধহয় আমি পিএইচডি করতে আমেরিকা যাব বললে তিনি খুশী হতেন। বলি, তাহলে আপনার মেয়েকে খাওয়াবে কে? আর অত টাকা তো আমার বাবার নেই যে আবার পিএইচডি এর জন্য আমেরিকা পাঠাবে।
মানুষ চতুর্দিক থেকে শুধু প্রশ্ন করছে, মনে হচ্ছে কোন সংবাদ সম্মেলনে আছি। উপর্যুপরি প্রশ্নের পাথরে বিক্ষত হয়ে যাচ্ছি। এদিকে নাস্তার ট্রে সামনে পড়ে আছে, এতক্ষণে বোধহয় সব নাস্তা ঘুমিয়ে পড়েছে, কেউ হাত ও বাড়াচ্ছে না, আর আমি তো পাত্র, তাই যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করছি। আর এদিকে মেয়েকে তো বের ই করছে না। আমি ভেবেছিলাম বোধহয় এমন হবে, আসলাম, দেখলাম, চলে গেলাম। কিন্তু না, এসেছি দুঘণ্টা হয়ে গেছে, এখনো তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি যে তারা মেয়েকে বাইরে আনবে কিনা। মেয়ের বাবা বারবার ভেতরে যাচ্ছেন আবার বাইরে আসছেন। মেয়ের দুই ভাই আমার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টিতে একটা হুংকার দেখতে পাচ্ছি, “তুই মানুষ সলিড তো? নাইলে বোন বিয়া দিমু না” আমিও নিজেকে খুবই নিষ্পাপ ভাবে উপস্থাপন করতে চাইলাম। এতে কেউ সন্তুষ্ট হল কিনা জানিনা তবে আমি যথেষ্ট সন্তুষ্ট হচ্ছিলাম নিজের পারফরম্যান্সে।
কিছুক্ষণ পর লম্বা ঘোমটা সমেত মেয়েকে এনে আমার সামনের সোফায় বসানো হল। আমার মাথা নিচু হয়ে গেল। ঘড়ির কাটা ঘুরে ঘুরে এপাশ থেকে ওপাশে চলে যায়, আমি লজ্জায় তার চেহারার দিকে তাকাতে পারিনা। সে আমার দিকে তাকিয়েছে কিনা তাও বুঝতে পারছিনা। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে কেটে যাওয়ার পর, সবাই বলল, “ওর সাথে কথা বল, কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে করতে পার”। এবার আমি বেশ বেকায়দায় পড়ে গেলাম, লজ্জায় তো তাকাতেই পারছিনা, এর উপর প্রশ্ন করব! আমি মাথা না উঠিয়েই বললাম, “না, আমি কি জিজ্ঞেস করব। মেয়েও চুপ করে আছে” বাবা, এগিয়ে গিয়ে মেয়ের হাতে একটা প্যাকেট গুজে দিলেন, সোনার চেইন ছিল বোধহয়। এর মধ্যেই মেয়েকে ভেতরে চলে যাওয়ার জন্য বলা হল। আমার মাথায় বাজ পড়ল! আরে, আমি তো দেখলাম ই না। সাথে সাথে মাথা উঠিয়ে দেখি মেয়ে ততক্ষণে উঠে ওপাশ ফিরে গেছে। দেখতে দেখতে সে অন্দরমহলে চলে গেল। আমার মনের মধ্যে তখন “অপরিচিতা” গল্প পাঠ শুরু হয়ে গেছে! আমি হাসফাঁস করতে লাগলাম। বাবার চেহারা কিছুটা উজ্জ্বল দেখাচ্ছে, বোধহয় মেয়ে তাঁর পছন্দ হয়েছে। সবাই এর মধ্যে বেশ মিশে গেছে একে অপরের সাথে। আর এদিকে আমার ভেতরে কম্পন শুরু হয়ে গেছে। নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল। কি করলাম? এবার এই সমস্যার সমাধান কি! কথায় বলে নিয়ত গুণে বরকত। আমি ই বলেছিলাম চেহারা দেখে কি হবে? তাই বলে চেহারা টাই দেখা হল না। নিজেকে বসে বসে বেশ খানিকক্ষণ দুষলাম।
এরপর আমরা সবাই উঠলাম, যাওয়ার বেলায় হবু শ্বশুর আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি দোয়া চেয়ে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। আমার মাথা ততক্ষণে ঘুরতে শুরু করে দিয়েছে। গাড়ি ছেড়ে দেয়ার পাঁচ মিনিটের সময় আমি বাবাকে বললাম, “বাবা, আমি মেয়ের চেহারা টা দেখতে পারিনি” এই কথার সাথে সাথে ড্রাইভার হার্ড ব্রেক কষল। বাবা চোখ দুটো অস্বাভাবিক রকম বড় করে ধপ করে সিটে শুয়ে পড়লেন।
(চলুক না ;-) )

কাঁকড়বিছানো রাস্তায় ঘষটে হাঁটার শব্দ পেয়ে ঘুমটা টুঁটে যায়।

কাঁকড়বিছানো রাস্তায় ঘষটে হাঁটার শব্দ পেয়ে ঘুমটা টুঁটে যায়। টেবিল ল্যাম্পটা জালালাম। সবকিছু ছিমছাম। ঘরটা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা গরম। একটা চাপা নিশ্বাসের শব্দ রয়ে-শয়ে কানে আসছে। বাসায় কেউ নেই। সবাই বেড়াতে গেছে- নানা বাড়ি।
রাতে ঘুম ভাঙলেই পেশাব চাপে। শীতের রাতে বিছানা ছেড়ে উঠাকে, অন্নপূর্ণার চূড়ায় আরোহনের মতো লাগে। পেশাব এমন এক বদখৎ জিনিস, চাপলে আর রক্ষা নেই। কোথায় শুনেছিলাম- পেশাপ চাপলে আর তা নির্গত করতে না চাইলে- নিজের প্রিয়তমার মুখ কল্পনা করতে হয়। বহু চেষ্টা করেও পারিনি। কল্পনা করতে চাই মৃণ্ময়ীর মুখ এসে পড়ে শর্মিলীর চেহারা। শেষে উঠে যাই।
জানালার কাঁচে কুয়াশা জমে জমে সুন্দর একটা অবয়ব তৈরি করেছে। প্রকৃতি এক আজব কারিঘর। যখন যা ইচ্ছা করে তাই সামনে নিয়ে আসে। ওয়াশরুম থেকে আসার পরে টুপুর টুপুর পানি পড়ার শব্দটা কানে আসে। বিরক্তিকর শব্দ। দুইবার উঠে গিয়ে ট্যাপগুলো চেক করে এসেছি। তবু শব্দটা আসছে। অন্যকিছু নয়তো! খট করে একটা শব্দ এল রুমের বাহির থেকে। তড়াক করে উঠে লাইটগুলো জ্বালিয়ে দিলাম।
বাসার প্রধান দরজা-টা হাট করে খোলা। কিছুটা অবাক হলাম, সাথে ভয় লাগতে শুরু করছে। যদিও বাসার নিচে দারোয়ান আছে। ঘুমানোর আগে-তো আমি দরজা জানলা সব চেক করেই ঘুমিয়েছিলাম! নাকি করেনি। স্পষ্ট মনে আছে-টিভি অফ করে দেয়ার পরে দরজা এসে লাগিয়েছিলাম। আশ্চর্যজনক ভাবে খেয়াল করলাম, বাথরুম থেকে এখন আর শব্দটা আসছেনা। দরজাটা বন্ধ করে লাইট অন করেই শুয়ে পড়লাম।
টিকটিক করে দেওয়াল ঘড়িটা সময়ের স্রোত বয়ে চলছে। কাটাগুলো কি সাবধানে সময় নিয়ে চলে যাচ্ছে অতীতের পথে! সেই পথে হেঁটে হেঁটে আমরা সামনে চলছি। এগিয়ে যাচ্ছি। মানুষ ভয় পেলে নাকি উচ্চমার্গীয় কথা কথা আসে মনে। আমারো তাই হচ্ছে। কিন্তু ভয় পাবার কি কারন আছে!
বাহিরে ভারী হয়ে শিশির পড়ছে। বাতাবীলেবু বাগান থেকে একটা মোহনীয় গন্ধ জানালার ফাঁক ফোকড় গলে বদ্ধ উষ্ণ রুমটাকে মায়াময় করে তুলছে। আমার হাতে “বকুলফুল”। রাতে ঘুম না আসলে আমার বই পড়ার অভ্যাস। বইয়ের পাতা উল্টানোর সাথে সাথে একটা টুংটাং শব্দ আসে। একবার চোখ তুলে তাকালাম জানালার কাঁচে। প্রথমে ভাবলাম আমার বিভ্রম। ভালো করে তাকালাম- চোখ জুড়ানো এক রমণীর ছবি আঁকা শিশিরে। কাঁচের চোখ গুলো দিয়ে জল পড়ছে, কিন্তু মেয়েটির মুখে হাসি। মায়াবতীরা এমন করে হাসে। মেয়েটি কি মায়াবতী। নাকি শুধু মায়া!!!
জলের শব্দ কানে আসছে। একটু একটু করে শব্দের মাত্রা বাড়ছে। কাছ থেকে। খুব কাছ থেকে আসছে ছড়ছড় শব্দ। বইটা বন্ধ করে দিলাম। বিছানা থেকে নামতে গিয়ে দেখি। ফ্লোরে জলের বন্যা। পায়ের পাতা পর্যন্ত ডুবে গিয়েছে। ওয়াশরুমের দরজা-টা ভিড়ানো। ওটার ফাঁক গলেই জলের স্রোত আসছে।
বালতি-টা জলে টইটুম্বুর। সেখানে একটা মেয়ে মানুষ মাথা ডুবিয়ে রেখেছে উবু হয়ে। তার কালো চুল জলের উপরে ভাসছে। ভয়ে হাত-পা কেঁপে যায়। দরজা-টা বাহির থেকে টেনে লাগিয়ে দিলাম তৎক্ষনাৎ। ধুমধুম করে চাপড় পরে। আমার পাগলের মতো হয়ে যাবার দশা। জানালার কাঁচে যে ছবিটা আঁকা দেখলাম, তা নেই। কেউ মুছে দিয়েছে হাত দিয়ে। একটা পাঞ্জার ছাপ স্পষ্ট।
দরজা ভেঙ্গে ফেলবে এমন আওয়াজ বেড়েই চলছে। শিড়দাড়া বেয়ে ঠান্ডা শিহরণ বেয়ে যাচ্ছে। শব্দটা বেশক্ষণ পরে থেমে গেল। দরজা খুলে দেখি- ভেতরে কিচ্ছু নেই। কেউ নেই। জলের রেশ মাত্র নেই। সবকিছু কি আমার মনের ভুল! এ হতেই পারেনা। পায়ের দিকে তাকালাম- ভেজা না। ফ্লোর একদম শুকিয়ে আছে।
ওয়াশরুমে রাখা আয়নার দিকে তাকালাম। নিজেকে আজকে অন্যদের চেয়ে সুন্দর লাগছে। অহেতুক ভয় পাওয়ার কারনে নিজে নিজেই হাসলাম। একটু পরেই দম বন্ধ হয়ে যাওয়া একটা চিৎকার শুনলাম। আমি অচল হয়ে আয়নার সামনেই দাড়িয়ে রইলাম সম্মোহিতের মতো। ঘাড়ে কিছু একটার নিশ্বাসের মতো লাগল। পিছনে তাকালাম! নাহ কিচ্ছু নেই। আবার আয়নায় মুখ করে তাকিয়ে তবদা লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা- যে মেয়েটাকে জানালার কাঁচে দেখলাম। সেই মেয়েটা এখন আমার পিছনে ঠায় দাড়িয়ে। মাথা ভর্তি কুচকুচে চুল। পীতবর্ণের চোখ থেকে জল পড়ছে ক্রমাগত। সেই মিষ্টি হাসিটাও লেগে আছে। মেয়েটাকে আমার খুব চেনা মনে হলো। তার চোখ মুছে দিতে ইচ্ছে হলো।
আয়না-টা ফুড়ে যেন রক্ত ছিটকে আসছে। আয়নাটায় চেপে ধরলাম। কাজ হলোনা। রক্ত বেরুচ্ছে। পরক্ষণেই দেখলাম- আমার কপাল বেয়ে গরম রক্ত বের হচ্ছে। সেখানে কোন যন্ত্রনা নেই, ব্যথা নেই। ভয় পেয়ে গেলাম। রক্ত বন্ধ হচ্ছেনা। পিছনের দাঁড়ানো মেয়েটার ঠোঁটে ক্রূর হাসি ফুটল। পিছনে তাকাতেই শূন্যে মিলিয়ে গেল। রক্তে হাত ভিজে যাচ্ছে। মেঝেতে টপটপ রক্তের শব্দ। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সদর দরজা দিয়ে বাহিরে যেতে উদ্যত হতেই- কিসের রক্ত! কিচ্ছু নেই। আড়চোখে জানালায় তাকালাম। সেখানে অষ্টাদশী তরুণী হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।
দরজায় লাথির শব্দে ঘুম ভাঙছে। মানুষের ভদ্রতা বলতে কিছু নেই। কলিংবেলের পাশাপাশি ক্রমাগত লাথি দিয়েই চলছে দরজাতে। একজন নয়। অনেক মানুষের কথা কানে আসলো। দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে একদল পোষাকধারী ঘরে ডুকল, তাদের সাথে এ বাড়ির সকল বাসিন্দাকে চোখে পড়ল। বাহিরে পাড়াশুদ্ধ মানুষের ভিড়। চিৎকার। চেঁচামেচি।
উপরতলায় খুন হয়েছে। বাথরুমে লাশ পড়ে আছে। গলা কেটে খুন করে পানির বালতিতে মাথাটা ডুবিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশ এসেছে তদন্ত করতে। সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমি বাকি ছিলাম। জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে এখুনি। মাথাটা বরফ শীতল হয়ে আছে।অনুভবগুলো কেমন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছেনা। একটা ভোঁতা অনুভূতি। একটা সিগারেট ধরালাম। সিগারেট পাফ করতে পারিনা। এমনি ধরিয়ে বসে থাকি।
বাসাটা খনকিছুর মধ্যেই পোষাকধারীরা তছনছ করে ফেলছে। টেবিলের উপরে রাখা ফুলদানিটা ইচ্ছে করে ছুড়ে মেরেছে। সেখানে ছুড়ি কাঁচি লুকিয়ে থাকতে পারে ভেবে হয়ত। আমি নির্বিকার। নির্মলা থাকে উপরতলায়। বাসায় কি জানে ঝামেলা করে এই বাড়িতে উঠেছে। একটা প্রাইভেট ফার্মে মোটা বেতনে চাকরি করে।
‘ওখানে হাত দিয়েন না’।
চারজন পুলিশ ভূত দেখার মতো চমকে উঠল যেন। প্রায় একসাথে বলল ‘কেন?’
‘আচ্ছা দিন। দেখুন কি আছে। এখন আপনারা যা বলবেন তাই হবে। করুন যা ইচ্ছা’।
বাড়ির অন্য বাসিন্দারা এর-ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। বিছানার কোণ থেকে পুলিশেরা স্কোরের কিছু অব্যাবহৃত প্যাকেট খুঁজে আনল। তাদের চোখে মুখে সপ্তাশ্চর্য দেখার আনন্দ মনে হলো। বাসিন্দাদের কেউ কেউ লজ্জায় মুখ ডাকলো। মহিলা যারা এসেছিল- তারা শাড়ির আচলে মুখ আড়াল করল। কমবয়সীদের চোখে একটা চাপা হাসির দমক দেখলাম। সিগারেট পুড়ে ছাই হয়ে এল। তদন্ত কর্মকর্তার চোখ আগুনে লাল। মনে হলো প্রেশার উঠে গেছে চোখে। রক্ত জমে আছে। চোখগুলো গেলে দিয়ে রক্ত বের করে দিতে ইচ্ছে হলো।
‘এই গুলো কি?’
‘আপনি ব্যাবহার করেন না বুঝি’?
পাল্টা প্রশ্নে কনস্টেবলদের মুখে হাসি চলে আসলেও ইন্সপেক্টরের মুখ আরো থমথমে হয়ে এল।
‘হারামজাদা! এইগুলি কি? তুই না বিয়া করস নাই’।
‘নবাবের পুত্রদের নবাবজাদা, সাহেবের ছেলেপুলেদের সাহেবজাদা বলে। আমার বাপ হারাম খেয়ে পেট ফুলায় না। তাই আমি হারামজাদা নই। এইগুলো কনডম। বিয়া না করলে কনডম ব্যাবহার করা যাবেনা, তা কি এই প্যাকেটে লিখা?’
তদন্ত কর্মকর্তা করিৎকর্মা লোক। তিনি প্যাকেটের গায়ে কি কি লেখা আছে তাতে চোখ বুলাতে শুরু করলেন।
হাসি পেল খুব। চেপে রাখলাম। কারন আমার সামনে দাঁড়ানো যে পুলিশ কর্মকর্তা আছে, তিনি যথাসম্ভব মোটা বুদ্ধির। পুলিশের হাত চিতা বাঘের মতো। খপ করে ধরেই প্যাঁদানি শুরু করে দিবে।
বাড়ির অন্য সকলের সাথে আমিও এসে দাড়ালাম নির্মলার ফ্ল্যাটে। মুখ থুবড়ে পড়ে আছে জলের বালতিতে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ কাউকে হাত দিয়ে দেয়নি। রক্ত আর জল মিশে একটা অদ্ভুত রং তৈরি হয়েছে। কাচা হলুদের চেয়ে একটু কড়া রং। কচুরিপানার ঝুরির মতো চুলগুলো তার ভাসছে। হাত দিয়ে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হলো। আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মেয়েটা নির্মলা। কণ্ঠনালীর ঠিক নিচে বাম দিকে একটা তাল তিল আছে ওর। চুমু খেতে ইচ্ছে করলো। অনেকগুলো উৎসুক চোখ চেয়ে আছে তার দিকে।
নিচ থেকে এক কনস্টেবল চিৎকার করছে। সে কিছু একটা পেয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা পড়িমড়ি করে ছুটে যাচ্ছে। তার সাথে ছুটে চলছে বাড়ির অন্য সকলে। আমি একা নির্মলার পাশে। তাকে ছুইতে ইচ্ছে করছে। খুব করে তার পুরুষ্ট ঠোঁট কামড়ে দিয়ে কামনার ঝড় তুলে দিতে ইচ্ছে করছে। তাকে কি কোন অনুভূতি ছুইবে? না ছুইবে না। সে হারিয়ে গেছে আমাবশ্যার চাঁদের মত। আমি জানি পুলিশ, পাড়ার লোক- বাড়ির বাসিন্দারা সবাই এখন আমার রুমে। আমি জানি তারা কি দেখছে। কি খুঁজে পেয়েছে পুলিশ তাও জানি।
জানালার কাচা শিশিরে আঁকা নির্মলার ছবি দেখছে অনেকজোড়া চোখ। নির্মলা এখন আমার কোলে। আমি তার চোখ দেখছি। একজোড়া শান্ত চোখ। সেই চোখে কোন অবিশ্বাস নেই!
ছবি
মনোয়ারুল ইসলাম
জানুয়ারি ২৯, ২০১৭

স্বপ্নের দেশ আমেরিকা ইশ্ ওখানে যদি একটি চাকরি পেতাম!!!

স্বপ্নের দেশ আমেরিকা ইশ্ ওখানে যদি একটি চাকরি পেতাম!!!
.
\বেপারটা কোন রকমে গিয়ে হোটেল থালা বাসন মুচতে পারলেও নিজেকে ধন্য মনে করতাম এমন! সুখী হতাম!
.
আপনি গেলেন! কাজ পেলেন! সুখী হলেন কারণ সুখ থাকে মাথায় কিংবা মনে!
.
বাস্তবতা হলো,
.
কাজে বিনোদনের অভাবে ৮৩ শতাংশ আমেরিকান কাজের সময় কঠিন চাপ অনুভব করেন!
.
৫৩ শতাংশ আমেরিকান নিজের চাকরি নিয়ে অসন্তুষ্ট,
.
৪৩ পার্সেন্ট আমেরিকান মনে করে সত্যিকার অর্থে তারা অসুখী!
.
আমেরিকার ইতিহাসের একটু পিছনে ফিরে যায়,
.
মার্কিন অভিনেত্রী মেলানি গ্রিফিথ ১৯৭১ সালে কিছু ছবি তুলেছিলেন যা পুরো বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো,
.
ছবিতে দেখা যায় মেলানি একটি পোষা সিংহের সাথে ঘুমাচ্ছেন! সুইমিং করছেন! মজা করেছেন! পড়াশুনা করছেন এক্কেবারে বন্ধুর মতো! যুগ যুগ দীর্ঘস্থায়ী ছিলো তাদের বন্ধুত্ব!
.
'রোর' সিনেমাটি এই ঘটনাটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হয়েছিলো!
.
ঘটনা তারও চল্লিশ বছর আগের তার মা হলিউড অভিনেত্রী টিপি হেডেন আফ্রিকা থেকে একটি সিংহ শাবক নিয়ে এসেছিলেন যা দিন থেকে দিন মেলানির বন্ধু হয়ে উঠে! গড়ে উঠে সখ্যতা!
.
জীবন হলো তেমনি সিংহের সাথে বসবাস করার মতো একটি বিষয়!
.
কঠিন থেকে কঠিনতর বিষয়কে সহজে আপন করে নিয়ে তা ইনজয় করা হলো প্রকৃত সাহসীকতা! জীবনের খেলাটা এই যায়গায়!
.
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান ঝুপড়িতে সেকেন্ড ইয়ারে অর্থনীতিতে দুইটা সাপ্লি দুইটা ইমপ্রোভ খেয়ে বসে আছে! এক ছোট ভাই এলো, জিজ্ঞেস করলাম, কি খবর? সে বললো, ভাই জীবন আমাকে খেলে দিয়েছে! তাকে বললাম, 'তুমিও জীবনকে খেলে দাও!' কথাটা বলার পর নিজের ভিতরেও শক্তি পেলাম!
.
এক জীবনে হাজারো সমস্যা আসবে! মাথার উপর পাহাড় ভেঙ্গে পড়বে! কাছের মানুষ দূরে চলে যাবে! যা ঘটবে তা ভাবনার অতীত!
.
সমস্যার সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করতে হবে! বন্ধুত্ব হয়ে গেলে সমাধান! এখন প্রতিদিন সকালে উঠে ভাবি, ওয়েলকাম পবলেম! তুমি এসেছিলে পরশু! কাল কেনো আসোনি!!!
.
লিখেছেন, Abdur Rob Sharif

ফোড়া

#ফোড়া
পাছার বাম পাশে দেশী বরই সাইজের একটা ফোড়া হয়েছে। ব্যথার ঠেলায় কোথাও দুই মিনিটও বসতে পারিনা।এর ভিতর আজ গরীব বলে উঠতে হয়েছে লোকাল বাসে, আজ যদি এই ফোড়া আমার পাছায় না হয়ে কোন মন্ত্রীর পিছনে হত তাহলে তিনি সেটা বিরোধী দলের চক্রান্ত বলে চালিয়ে দিতেন, এই নিয়ে দেশের সব পত্রিকা টিভি চ্যানেল গুলোতে খবর ছাপানো হত, টিভি স্ক্রীনের হেডলাইন হত :-
"ওমক মন্ত্রীর পশ্চাদাংশে কুমড়া সাইজের ফোড়া হয়েছে, এতে বিরোধী দলের হাত রয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে, এমন বেদনা শুধু উনার একার না এটা পুরো জাতির বেদনা.. আমাদের টিভি চ্যানেল এর পক্ষ থেকে তার সুস্থতা কামনা করি"
সংসদে হয়ত শোক দিবস পালনের প্রস্তাব দেয়া হত... তারপর স্পীকার বলতেন... হা যয় যুক্ত হয়েছে হা যয় যুক্ত হয়েছে অতএব দাবিটি পাশ করা হইল
অত:পর বিরোধী দল এহেন দাবী প্রত্যাখান করে সংসদ কক্ষ ত্যাগ করত।
কিন্তু আজ মন্ত্রী না বলে কেউ আমার এই ফোড়ার খোজ খবর রাখেনা।
পাশের সিটেই এক মহিলা বসেছে তিনি বাম হাতে একটা দামী টিস্যু পেপারের বক্স ধরে রেখেছেন আর ডান হাত দিয়ে একটা টিস্যু দিয়ে নাক চেপে রেখেছেন অথচ কোথাও কোন গন্ধ নেই।
মহিলা যে বিশাল বিত্তশালী সেটা তিনি তার পোশাক পরিচ্ছেদ, ব্যবহার আর তার আইফোন সেভেন প্লাস দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন আমার মত ফকিন্নি টাইপ পাব্লিকদের।
উনার টিস্যু থেকে দারুন এক সুগন্ধ বের হচ্ছে ইচ্ছে করছে হাত বাড়িয়ে বলি আফা গো.. ও আফা..দেন না একটা টিস্যু পেপার আমিও ঘ্রান নি, কিন্তু না তা করা যাবেনা। গরীব হতে পারি কিন্তু ভিক্ষুক তো না। নিজের ভিতরে বড়লোকের একটা ভাব আনলাম, তাকে বললাম এই যে ম্যাম একটু সরে বসেন ঐদিকে। আপনি এত বড় সিট রেখে আমার দিকে সরে আসছেন কেন? কথাটা একটু জোরেই বলে ফেললাম সবাই আমাদের দিক তাকালো। মহিলাটি এবার টিস্যু মুখ থেকে সরিয়ে বলল - আমি তো আমার সিটেই আছি আপনার সিটে তো নেই। আরে আপনি তো আচ্ছা মহিলা- নিজের এই ড্রাম সাইজের শরীরটা নিয়ে শুধু তো আপনার সিটেই নেই আমার সিটের একটা অংশও আপনি নিয়ে রেখেছেন আবার বড়বড় কথা বলছেন কথা শেষ হবার আগেই সিট থেকে একটু লাফিয়ে উঠলাম বাসের ঝাকুনিতে...একদম ফোড়ার উপর কেউ যেন একটা গুতা দিল এমন মনে হল জানটা বেরিয়ে যাবার উপক্রম। মা গো বলে চিল্লায় উঠলাম।
এদিকে মহিলা আমার দিকে শকুনে দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল - আমি কি আপনার বাবার টাকা খেয়ে ড্রাম হয়েছি? আপনার এত মাথাব্যথা কেন? আর আপনার ভাল না লাগলে ও পাশে অনেক সিট আছে ওখানে গিয়ে বসেন, সুন্দরী মেয়ে দেখলে শুধু কথা বলার ধান্দা বের করেন তাই না?
ফোড়ার উপর এত ব্যথা লেগেছে যে কি বলব সেটাই খুঁজে পাচ্ছিনা, মেজাজ হারিয়ে বললাম- আসছেন তো সারা গায়ে মেক আপ মাইরা, পাতিলের মত কালা মুখটা সাদা করছেন.. নিজেরে কি আপনি নায়িকা ভাবেন নাকি! ড্রামের মত শরীর নিয়ে নিজে ঝামেলায় আছেন আবার অন্য মানুষরেও ফেলতে লোকাল বাসে উঠছেন, ফালতু মেয়ে মানুষ কোথাকার। অন্য সিটে গিয়ে বসলাম। এমনিই আজকে চুয়ান্নতম চাকুরীর ভাইবা তার মধ্য এমন কান্ড করে বসল এই মহিলা! অবশ্য এতে আমার দোষও কম না তারপরেও মহিলারে একশ একটা অভিশাপ দিলাম। মহিলা আর আমি একই জায়গায় নেমে পড়লাম।
আমি একটা চায়ের দোকানে এসে দাঁড়ালাম। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মেজাজ ভাল হয়ে গেল, আধা কাপ চা শেষ না হবার আগেই মাথার উপর কি যেন পড়ল। উপরে চেয়ে দেখি বুড়ো একটা কাকের পশ্চাদাংশ মিসাইলের মত আমার মাথার দিকে তাক করা, কাক টা এবার বাসের ঐ মহিলার মত আমার দিকে তাকিয়ে কা কা করতে করতে চলে গেল। পানি দিয়ে আন্দাজে ধুয়ে নিলাম একটা ছেড়া পত্রিকা দিয়ে মাথাটা মুছে নিলাম। ভাইবা রুমে ঢোকার জন্য অপেক্ষা করছি, একুশ নম্বরে সিরিয়ালে আমার ডাক পড়ল। রুমে ঢুকেই শালা আমি তো অবাক!! এ দেখি বাসের সেই মহিলা মস্ত বড় চেয়ারে বসে আছে, আমাকে দেখেই ভ্রু কুঁচকে গেল তার। ঢোক গিলে অনেক কস্টে নিজেকে স্বাভাবিক করলাম, অনিচ্ছাবশত সালাম দিলাম, উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাত কড়মড় করতে করতে বললেন বসুন। পাছাড় ফোড়া নিয়ে বসতে ভয় পাচ্ছিলাম তারপরেও বসে পড়লাম। উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমি বললাম - ম্যাম শুভ সকাল। উনি বললেন - শুভ কিনা সেটা একটু পরেই বোঝা যাবে।আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে। এবার উনি ভাইবা নেয়া শুরু করলেন।
ম্যাম: আপনার নাম কি?
আমি: বোরাহান উদ্দীন মিথুন
ম্যাম:বোরহান নামের অর্থ কী?
আমি: ভাগ্যবান, প্রমান (এটা বলতে গিয়ে কেন জানি নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছিল)
ম্যাম: আর মিথুন নামের অর্থ কী?
আমি: মিথুন নামের অর্থ- জোড়া।
ম্যাম:চাদের রাজধানীর নাম কী?
আমি: জানা নেই।
ম্যাম: ওডি এর লেখক কে?
আমি: মনে এসেও মনে পড়ছে না, বার বার মাথা চুলকাতে লাগলাম। তারপর ম্যামের মুখের দিকে এতিমের মত তাকিয়ে রইলাম।
ম্যাম: ইংরেজিতে ট্রান্সলেট করুন -
"আজ বাসের মধ্য এক ভদ্র ও সম্মানিত মহিলাকে এক ইতর ছেলে গায়ে পড়ে অপমান করেছে "
আমি: In a bus today a gentle and honorable lady has been insulted by a lousy boy in the way of officiously (ভুল বললাম নাকি সঠিক বললাম আল্লাহ মালুম, ম্যামের দিকে তাকিয়ে রইলাম উনার এক্সপ্রেশন দেখার জন্য সঠিক নাকি ভুল হয়েছে এটা দেখার জন্য)
ম্যাম: আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন, ভুল বলেছি তাই নয়তো আমাকে নিজের মুখে ইতর ঘোষনা করার ব্যাপারটি নিয়ে উনি পৈচাশিক আনন্দ পাচ্ছেন এই ভেবে হাসছেন। বোর্ডে যান গিয়ে ঐ ইকুয়েশনটা সলভ করুন, সময় পাবেন ১ মিনিট। ইউর টাইম স্টার্টস নাউ..
আমি: এই ম্যাথ ইকুয়েশন আমি আমার বাপের জন্মেও দেখিনাই, হাবিজাবি একটা লিখতে যাচ্ছিলাম অনেক ভেবে তখন ই উনি বললেন আপনার সময় শেষ, চেয়ারে এসে বসুন। নিজেকে জাতির সেরা গাধা মনে হচ্ছিল এতদিন এলাকার সেরা গাধা মনে হলেও আজ জাতীয় গাধা মনে হচ্ছে, চুপচাপ চেয়ারে এসে বসলাম
ম্যাম:আপনার দাদার খালাতো বোনের ননদের ভাসুর আপনার কী হয়?
আমি: ইচ্ছে করছিল বলতে.. ম্যাম আপনার কাছে ব্যাঙের ইমোজি হবে? কিন্তু প্রশ্নের উত্তর বের করতে মনোযোগ দিলাম..ভাবতেই ভাবতেই উনি বললেন, আপনার কি আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে কোন ধারনা আছে?
আমি: এবার আমার চোখমুখ বেশ খানিকটা উজ্জ্বল হয়ে গেল, বললাম - জ্বী ম্যাম...আমি জানি। এটা একটা বদনা কোম্পানি, আপনাদের কাজ স্বল্প ও মুনাফাযোগ্য বদনা বাজারে সেল করা যাতে স্বল্প আয়ের মানুষেরাও কম দামে কিনতে সক্ষম হয়।
ম্যাম: আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন- আপনার মত বে- আক্কেল লোক ভাইবা দিতে কেন আসে সেটা আমার মাথায় ঢোকে না, একটা কোম্পানিতে ভাইবা দিতে আসলে সেই কোম্পানি সম্পর্কে যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করে আসতে হয় সেই কমন সেন্সটা আপনার নেই! আর হ্যা এটা কোন বদনা কোম্পানি না, এটা একটা প্লাস্টিক প্রোডাক্ট তৈরিকারী কোম্পানি।
আমি: ঠোট দুটো ফাক করে শুধু বললাম - ও
ম্যাম:আপনার একাডেমিক রেজাল্ট তো দেখছি খুব ভাল কিন্তু কান্ড জ্ঞান, অন্যান্য বিষয়ে দেখছি আপনার অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি টাইপের। প্রশ্ন ফাস করে রেজাল্ট ভাল করছিলেন নাকি?
আমি: না ম্যাম, একদম না। আমি জীবনেও প্রশ্ন ফাস করিনাই, শুধু এক্সামের আগেরদিন রাতে একটা সাজেশন দিত স্যারেরা সেটা পড়ে যেতাম কিন্তু কোনদিনও প্রশ্ন ফাস করিনাই।
ম্যাম:আপনার ভাইবা রেজাল্ট বিশে শুন্য। আপনি যেতে পারেন।
একটা সালাম দিয়ে উঠে আসছিলাম তখনই পিছন থেকে ম্যাম ডাক দিয়ে বললেন... এই যে আপনি বসুন আর একটু।
ম্যাম: আপনাকে একটা সুযোগ দিচ্ছ... এটাতে পাশ করলেই আপনার চাকরি কনফার্ম।
আমি: আমার আবেগে কান্দা চইলা আসল, আবেগ সংযত করে মাথা নেড়ে বললাম আমি প্রস্তুত।
ম্যাম: আপনি প্রমাণ করুন- দুনিয়ার সেরা সুন্দরী আমি.. যদি আপনি সুন্দরভাবে প্রমান করে আমাকে খুশী করতে পারেন তাহলে আপনি পাশ।
আমি: মনে মনে সেই খুশি হইলাম। চেয়ার ছেড়ে উঠে টেবিলের উপর দু হাত দিয়ে ভর দিয়ে ম্যামের চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম :-
আপনার এই নাকটা বাশির মত..যেই নাকের জন্য আলেকজান্ডার তাবৎ পৃথিবী চষে বেড়িয়েছে...মনে হচ্ছে কোন চিত্রশিল্পী খুব যত্ন নিয়ে আপনার এই নাক একে দিয়েছেন, আপনার কানে থাকা ঐ কানের দুলে যেন এক অদৃশ্য নীলা পাথরের ছোঁয়া রয়েছে যাতে অন্ধকারেও পথ খুঁজে পাবে কোন পথহারা যোদ্ধা, অত:পর সে আপনাকেই পুজো দেবে। আপনার ঐ অজগরসম চুলে নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে চেয়েছিল শত বর্ষীয়ান কোন সাধু..যিনি শুধু আপনার ই অপেক্ষায় ছিল, তার বুকে থাকা আজন্মের তৃষ্ণার খোরাক আপনার এই চুল, আপনার দুচোখে যেন পৃথিবীর সমস্ত মায়া এসে ভর করেছে, এক নিমিষেই সে গ্ল্যাডিয়েটরকেও মায়ার জালে ফেলে দিকহারা করতে পারবে...আপনার এই হলদে ফর্সা রুপে যেন হারিয়ে খোজে তাবৎ মমহাপুরুষ, আপনি সম্রাজ্ঞী.. আপনি দেবী..যার পূজো দেবার জন্য দুনিয়া পাড়ি দিতেও কুন্ঠবোধ করবেনা কোন মহা পুরুষ । আপনার দেহের এই সুন্দর আকার আপনাকে আরো অনিন্দ্য সুন্দরী করে তুলেছে...একদম ঠিকঠাক এই আকার আপনাকে এক নতুন রুপ দিয়েছে... আপনি স্থুল নন আবার বেশি চিকনও নন..আর এই সব ব্যাপারটাই আপনাকে করে তুলেছে দুনিয়ার সেরা সুন্দ্রী। (ম্যাম আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন... এবার পরিস্থিতি সামলে আমাকে বললেন... আপনি বাইরে যেয়ে অপেক্ষা করুন, রেজাল্ট একটু পরই পেয়ে যাবেন।
আমি বাইরে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। এর মাঝে একটা লোক এসে আমাদের বিস্কুট আর চা দিয়ে গেল। বিকাল নাগাদ রেজাল্ট দেয়া হল, তাতে আমার নাম নেই। পোস্ট ছিল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট হেড। আমি চলে আসতে যাচ্ছি তখন একজন এসে আমার হাতে একটা পেপার দিলেন, সেটা ছিল জয়েনিং লেটার, আর ছোট একটা কাগজে লেখা ছিল-
মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে হেড পদে চাকুরী না দিতে পারার জন্য দু:খিত,তবে আপনি আমাদের বদনা দোকানে গিয়ে গিয়ে মাঠ পর্যায়ে সেল করতে পারবেন পার্ফেক্ট ভাবে সেটা আপনাকে দেখে বুঝেছি। আপনার মত এত সুন্দর করে কেউ আমাদের বদনার প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারবেনা, আপনি রাজি থাকলে কাল থেকেই কাজে জয়েন করতে পারেন। স্যালারির ব্যাপারটা ম্যানেজার সাহেবকে বলে দিয়েছি, উনি যথেষ্ট ভাল আ্যমাউন্ট ই দিবেন।
এমডি
ফোড়ার ব্যথাটা হুট করেই বেড়ে গেল, কাল থেকে বদনা বেচতে বের হব...এই বদনা... এই বদনা বলে হাক ছাড়তে হবে। অন্তত বেকার তো থাকতে হবেনা। এই দেশে মন্ত্রীর ফোড়ার কথা সবাই ভাবলেও আমার মত বেকারের ফোড়ার কথা ভাবার লোক কই! আমার ব্যথা আমার ই।
লেখা: Borhan uddin

এটা হচ্ছে মর্যাদার সাথে আবৃত দানশীলতা পুত্র !


মেয়েটি জিজ্ঞাসা করলো এই তোমার ডিম কত করে বিক্রি কর?
বৃদ্ধ ডিমওয়ালা বলল,প্রতিটি ৫ টাকা করে ম্যাডাম।
আমি ৬ টা নেব,২৬ টাকায় দেবে?না দিলে আমি চলে যাব।
বৃদ্ধ ডিম বিক্রেতা বলল আপনি নিয়ে যান,ওই দামেই।এটা হয়ত আমার জন্য শুভ সূচনা। কেননা আমি প্রায়ই সারাদিনে একটা ডিমও বিক্রি করতে পারি না।
মেয়েটি ডিম কিনে নিয়ে চলে যাবার সময় খুশি মনে ভাবলো এই গুলো কিনে সে জিতেছে।অতঃপর সে তার দামী গাড়িতে চড়ে বন্ধুদের সাথে খেতে রেস্টুরেন্টে গেল।সেখানে সে এবং তাঁর বন্ধুরা তাদের ইচ্ছে মত পছন্দের খাবারের অর্ডার দিল।তারা খাবারের খুব কম-ই খেল,বেশিরভাগই নষ্ট করে রেখে দিল।বিল দিতে গিয়ে মেয়েটি জিজ্ঞাসা করল কত হয়েছে?
তারা ১৪০০টাকা বিল করলো মেয়েটি ১৫০০ টাকা দিয়ে বলল বাকিটা আপনার টিপস।
ঘটনাটা মেয়েটির কাছে খুব-ই স্বাভাবিক কিন্তু ওই ডিম ওয়ালার কাছে বিশাল কিছু।
এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয়টা হচ্ছে,আমরা আমাদের ক্ষমতা সবসময় কেন গরিব মানুষদের সাথে ব্যবহার করি?আর আমাদের বদান্যতা সবসময় এমন মানুষদের কাছে দেখাই যাদের কাছে বদান্যতার কোন মূল্যই নেই?
কোথায় যেন আমি একবার পড়েছিলাম...
আমার বাবা সবসময় সাধারন জিনিস গুলো গরিব মানুষদের কাছে থেকে চড়া দামে কিনতেন,যদিও জিনিসগুলোর তাঁর প্রয়োজন ছিল না।মাঝে মাঝে বাবা তাদের অতিরিক্ত-ও কিছু দিতেন।আমি এগুলো খেয়াল করে একদিন জিজ্ঞাসা করলাম তুমি এই গুলো কেন কর? বাবা বলল এটা হচ্ছে মর্যাদার সাথে আবৃত দানশীলতা পুত্র !

ইন্টারনেট থেকে অনুবাদের চেষ্টা...

যন্ত্র

*****যন্ত্র *******
এক লোকের বাড়ি সার্চ করে পুলিশ  জাল নোটছাপার মেশিন পেয়ে গেল । তাকে গ্রেফতারকরতে গেলে সে পুলিশকে বলল- আমাকেগ্রেফতার করতে চান কেন? 
আমার কাছে তো একটাও জাল টাকার নোট পাননি। 
পুলিশ বলল- কিন্তু জাল নোট ছাপার যন্ত্রপাতি তো পেয়েছি ।
লোকটি বলল- তাহলে একটি মেয়েকে রেপ করার দায়েও আমাকে গ্রেফতার করুন । 
পুলিশ- আপনি কি কোন মেয়েকে রেপ করেছেন?
লোকটি- না, কিন্তু রেপ করার যন্ত্র তো আমার কাছে আছে!

Sunday 28 January 2018

মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন "বীরপ্রতীক তারামন বিবি"

মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন "বীরপ্রতীক তারামন বিবি"

রাষ্ট্র তাকে কি দিয়েছে তা নিয়ে এই মহামানবরা কখন ভাবেন না,সে জন্যই তারামনরা বীরপ্রতীক।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তার চিকিৎসা দিচ্ছে।আমরা মাস শেষে সন্মানি কিছু টাকা দেই তাদের।টাকাই কি সন্মানের চাবিকাঠি!!? এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীতে আনা হয়।এখন রাষ্ট্র অনেক টাই বিরক্ত নয় তো? তারামনদের নিয়ে।রাষ্ট্রের জন্য তারামন কিন্তু বিরক্ত হননি ৭১ এ।তারামনরা প্রতি যুগে যুগে জন্মায় না।যারা ইতিহাস আলোকিত করে রাখেন তাদের প্রাপ্য কতটুকু দিতে পারলাম।আধুনিক বিশ্বে,উন্নত চিকিৎসার যুগে আজও তারামন পরে থাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেখানে রোগীর বেডে বিড়াল শুয়ে থাকতে দেখি,আমি নিজেকে রাষ্ট্র ভাবলে আমি লজ্জিত।নাগরিক ভাবলে নির্লজ্জ। তারামন বিবির চিকিৎসা হোক আধুনিক দুনিয়ার সবচাইতে উন্নত হাসপাতালে,সেই ব্যয় ভার বহন করবার সামর্থ রাষ্ট্রের আছে।যদি তা না হয় বুঝে নেবো রাষ্ট্র তারামন বিবিদের প্রতি বিরক্ত ও নিষ্ঠুর  
# Mnf Bitdut Sarkar
  
Go Event -  Click
বীর প্রতীক তারামন বিবি উন্নত চিকিৎসা হোক আধুনিক বিশ্বের উন্নত হাসপাতালে

কবিতা আবৃত্তি | আমার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম | লেখক মোঃ রাশেদুল ইসলাম | Powered By Rajibpur News



   

বৃদ্ধাশ্রম....
মাঝে মাঝে মনে হয় না থাকলেই দেশটা কত সুন্দর হত। ভালোবাসা গুলো দৃঢ় হত। আবার পরোক্ষনেই যখন নির্মমতা চোখের সামনে ভেসে উঠে তখন নিজের অজান্তেই বেড়িয়ে আসা দীর্ঘশ্বাসটা মনে করিয়ে দেয়, এর থেকে ভালো উদ্যোগ আর কি ই বা হতে পারে...!!
সময়, যুগ, প্রযুক্তি আমাদের আধুনিক থেকে আধুনিকতর করে তুলছে ঠিক ই কিন্তু আমাদের মনুষ্যত্বকে গ্রাস করছে দিনকে দিন। 

আমার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম

আভিজাত্য আর নিজেকে প্রমাণ করার মৌহ আমাদের এতটাই অন্ধ করে দিয়েছে যে-- যাদের হাত ধরে আমাদের পথ চলার সূচনা, আমাদের মুখের বুলি ফুঁটাতে যারা প্রথম ভূমিকা রেখেছে, যারা আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রথম হাত তালি দিয়ে আমাদের উৎসাহিত করেছে আমরা তাঁদের ই আমাদের কাছ থেকে আঁড়াল করতে মরিয়া হয়ে উঠি।
আভিজাত্যে ঘেরা নতুন বাড়ি, নতুন নতুন সব ফার্নিচার এর মাঝে পুরনো জিনিস গুলো যেমন বড্ড বেমানান ঠিক তেমনি মানুষগুলোও....
আভিজাত্যের মায়াজালে ঘেরা নতুন ড্রেসিংটেবিলটাতে পুরনো বৃদ্ধ বাবা তার চুল গুলোকে আনমনে যত্নে গুছিয়ে নিচ্ছে। মা হয়তো শাড়ির আঁচল মাথায় তুলে চশমাটা চোখে দিচ্ছে। ডাইনিং টেবিলে বসে বাবা মা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছে।
নাহ্; বড্ড বেমানান লাগে এইসব।
এর থেকে ভালো তাঁদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা। ৬ মাসে একবার ফোনে খোঁজ নিবো আর মা দিবস বাবা দিবসে ঘটা করে ফেইসবুকে পোস্ট দেয়ার জন্য একবার গিয়ে সেল্ফি তুলে আসবো ব্যস.............!!
ধিক্কার জানাই সেই সব মানুষ নামধারী পশুদের প্রতি। 😡
এমন আভিজাত্য আর প্রযুক্তি আমার দরকার নেই......
-হিমি


=======================================================================

প্রিয় রাজিবপুর বাসী,
আসসালামু আলাইকুম......সবাই কে
♦স্বপ্নীল রাজিবপুরের♦পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

রাজিবপুরে অনেক মেধাবী মুখ আছে


আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষ কে সমান মেধা ও জ্ঞান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু পরিবেশ- পরিস্থিতি ও সুযোগ সুবিধার অভাবে অনেক শিশুরই সেই মেধা বিকশিত না হয়ে অকালে ঝরে যায়।
আবার, বাঙ্গালী হয়েও বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতি থেকে দুরে সরে অপসংস্কৃতিতে নিমজ্জিত হচ্ছে আমাদের তরুন সমাজ।

https://www.facebook.com/groups/1704600509803133/


আমাদের রাজিবপুরে অনেক মেধাবী মুখ আছে,যাদের মাঝে অনেক সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে।তাদের কাছ থেকে আমরা অনেক ভালো ভালো লেখা পাই....কিন্তু সেটা কিছু দিনের মধ্যেই হারিয়ে যায়। বড় জোর ফেসবুকে কিছুদিন আলোচনা... তারপরই থেমে যায়।

এই সব দিক বিবেচনায়( স্বপ্নীল রাজিবপুর) রাজিবপুরের তরুন সমাজের জন্য একটি প্লাটফর্ম তৈরী করতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে প্রত্যেকটি তরুন মেধার বিকাশ সাধন এবং সেই সাথে বাংলা ভাষা ও বাঙ্গালী সংস্কৃতি নিয়ে চর্চা করার সুযোগ পাবে।

আমরা সবার লেখা সংগ্রহ করে..... প্রতিটি দিবস কেন্দ্রীক ম্যাগাজিন বই বের করবো ইনশাআল্লাহ।

https://www.facebook.com/groups/1704600509803133/


এবং ম্যাগাজিন বইটি প্রিন্ট কপি সহ.... PDF file.. Android apps মধ্যে নিয়ে আসবো...
যাতে সবাই সহজে রিসিভ করতে পারে।

https://www.facebook.com/groups/1704600509803133/


তাই সবাই কে..... লেখা জমা দেওয়ার জন্য বিশেষ ভাবে আহবান করা হলো।

লেখা জমা দেওয়ার ঠিকানা :

FB:স্বপ্নবাজ শফি
Email: shapnobajshofi@gmail.com
মোবাইল: স্বপ্নবাজ শফি: 01760606204/01621662000

জাহিদুল ইসলাম
FB:zahidbd24
Email:mdzahidulislam1000@gmail.com
মোবাইল :01948645226
জমা শেষ তারিখ: ২০/০২/২০১৮