|
তাবলিগ জামাতকে বিভক্তি থেকে রক্ষা করুন। |
তাবলিগ জামাতকে বিভক্তি থেকে রক্ষা করুন।
সাইয়েদ সালমান হোসাইনী নদভী
দাওয়াত ও তাবলিগ সব নবী-রাসুলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল। তাদের দাওয়াত
ছিল তাওহিদে খালেস, রেসালতের প্রকৃতি এবং আখেরাতে ঈমান এই তিন ভিত্তির ওপর।
তবে তাদের কাজের ধরনে ভিন্নতা ছিল। প্রিয়নবী সা. হলেন শেষ নবী এবং
সর্বযুগের নবী। গোটা মানবতা তাঁর উম্মত। যারা দাওয়াত কবুল করেছে এবং
অনুসারীদের তালিকায় যারা অন্তর্ভুক্ত তাদেরকে ‘উম্মতে এজাবত’ বলা হয়। আর
যাদের মধ্যে কাজ চলে তাদেরকে বলা হয় ‘উম্মতে দাওয়াত’।
রাসুল সা.
মক্কা মোকাররমায় তের বছর সব শ্রেণি, পেশা, গোত্র ও ধর্মের মানুষদেরকে
দ্বীনের পথে দাওয়াত দিয়েছেন। সেই দাওয়াতের ভিত্তি ছিল কুরআনে কারিমের আয়াত
‘আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহ্বান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে
উত্তমরূপে এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন পছন্দযুক্ত পন্থায়’। মদিনায়
হিজরতের পর যে বিধানের দিকে দাওয়াত দিচ্ছিলেন তা বাস্তবায়ন শুরু করলেন। যা
একটি পূর্ণাঙ্গ ও গোছালো আকারে বাস্তবে রূপ নেয়। এই স্তরে এসে দাওয়াতের
সঙ্গে বিজয়ের কাজও শুরু হয়ে যায়। যার ফলে ১০ বছরে ১০ লাখ বর্গমাইল এলাকা
অর্থাৎ পুরো জাজিরাতুল আরব বিজয় হয়ে যায়। বিশ্বব্যাপী এই মিশনকে ছড়িয়ে
দিতেই রাসূল সা. জীবনের শেষ মুহূর্তেও ‘উসামা বাহিনী’কে পাঠানোর প্রস্তুতি
গ্রহণ করেন। সিদ্দিকে আকবর রা. খেলাফতে অধিষ্ঠিত হয়েই সেই বাহিনী পাঠিয়ে
দেন। পরবর্তী সময়ে খেলাফতে রাশেদীনের আমলে এই ধারা অব্যাহত থাকে। এমনকি তিন
চার শতাব্দী পর্যন্ত ইসলামের বিজয়ের এই ধারা চলতে থাকে।
রাসূল সা.
পর্যন্ত এসে নবুওয়াতের ধারার সমাপ্তি হয়েছে। তিনি ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন,
পরবর্তী শতকগুলোতে মুজাহিদ, মুসলেহ, দা’য়ী ও মুবাল্লিগরা নবওয়াতি কাজ
আঞ্জাম দেবেন। বিগত চৌদ্দশ বছরে যত সংস্কার ও সংশোধনমূলক আন্দোলন হয়েছে
মূলত সবগুলোই নবুওয়াতি কাজের অংশ। তবে আগেকার নবী-রাসূলদের যেমন এলাকা ও
সময়কাল নির্ধারিত ছিল ওলামায়ে উম্মতের ক্ষেত্রেও তেমনি। তাদেরও সময়কাল ও
খেদমতের গ-ি ভিন্ন ভিন্ন। নবী-রাসূলদের দাওয়াতের মৌলিক ভিত্তি যেমন অভিন্ন
ছিল, তবে তাদের কাজের ধরন ও কর্মপদ্ধতিতে ভিন্নতা ছিল, তেমনি তা আলেমদের
ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এই বিষয়টির
প্রতি খুবই গুরুত্ব দিতেন। কোনো দল বা গোষ্ঠীর কাজকে একমাত্র ও চূড়ান্ত
ইসলাম সাব্যস্ত করতে মানা করতেন। এই উদ্দেশ্য সামনে নিয়েই তিনি লক্ষ্মৌ’র
তাবলিগি মারকাজে বিগত শতকের ৪০ থেকে ৫০ সালের মধ্যবর্তী সময় ‘তারিখে দাওয়াত
ও আজিমত’ (সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস) এই বিষয়ে বক্তব্য দিতে থাকেন। এই নামে
কিতাবও বেরিয়েছে। এর প্রথম খ-ে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. থেকে মাওলানা
জালালুদ্দিন রুমী পর্যন্ত মুজাদ্দিদ ও মুসলিহীনদের জীবন ও অবদান স্থান
পেয়েছে। দ্বিতীয় খ-ে ইমাম ইবনে তাইমিয়ার সংস্কারমূলক কার্যক্রম, তৃতীয় খ-ে
হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানীর সংস্কার আন্দোলন এবং চতুর্থ খ-ে শাহ ওয়ালীউল্লাহ
রহ.-এর সংস্কারমূলক কার্যক্রমের কথা স্থান পেয়েছে। এর পরের দুই খ-ে হযরত
সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ.-এর ইসলাহী আন্দোলনের বিবরণ পেশ করেছেন। সাইয়েদ শহীদ
রহ.-এর আন্দোলনের পর তাঁর খলিফা ও অনুসারীদের মধ্যে হযরত মাওলানা ফজলুর
রহমান গঞ্জেমুরাদাবাদী এবং হযরত মাওলানা সাইয়েদ মুহাম্মদ আলী মুঙ্গেরী
রহ.-এর সংশোধন ও সংস্কারমূলক কার্যক্রমের ওপর কিতাব লিখেছেন। এরপরে চৌদ্দ
হিজরী শতকের এক মহান সংস্কারক মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস রহ. এবং এই শতকেরই
অন্যান্য সংস্কারক মাওলানা আবদুল কাদের রায়পুুরী, মাওলানা মুহাম্মদ
যাকারিয়া কান্ধলবী এবং মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ কান্ধলবী রহ.-এর জীবন ও
খেদমতের ওপর তিনি নিজে কিতাব লিখেছেন অথবা অন্য কাউকে দিয়ে লিখিয়েছেন। এই
শতাব্দীর সংস্কারকদের মধ্যে মাওলানা আশরাফ আলী থানভী এবং মাওলানা হোসাইন
আহমদ মাদানী রহ.-এর জীবন ও খেদমতের ওপর কিতাবও প্রকাশিত হয়েছে।
এই
মনীষীরা সংস্কার ও সংশোধন আন্দোলনের অনেক বড় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যাঁদের
খেদমত উপমহাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। একটি
বিষয় স্পষ্ট, মৌর্লিক বিষয়ে ঐকমত্য থাকার পরও তাদের কাজের ধরন এবং
কর্মপদ্ধতিতে পার্থক্য রয়েছে। উম্মতের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে তাঁরা
পৃথক পৃথক পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। তাঁরা মূলত ইসলামের বিস্তৃত গ-িতে নানা
শাখায় খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন।
হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. দ্বীনের
ব্যাপারে গাফিলতি, অজ্ঞতা এবং বিক্ষিপ্ততার যুগে দ্বীনের প্রকৃতি, ইবাদতের
গুরুত্ব, দ্বীনের সেবা এবং প্রাথমিক দ্বীনি প্রয়োজন পূরণের আন্দোলন শুরু
করেন। ঘর থেকে বেরিয়ে উম্মতের কাছে গিয়ে কালেমায়ে তাইয়েবার প্রকৃতির দিকে
দাওয়াতের যে ধারা তিনি সূচনা করেন তা অবিশ্বাস্য গতিতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে
পড়ে। মৌলিকভাবে এটা ছিল দ্বীনের স্তম্ভগুলো প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। যাকে
ইলিয়াস রহ. দ্বীনের ‘আলিফ বা তা’ তথা প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে গণ্য করতেন।
(দেখুন মালফুজাতে ইলিয়াস, পৃষ্ঠা ২৬) অর্থাৎ এটা হলো দ্বীনের একদম সূচনা
পর্বের পাঠ্য। যাতে মাসায়েলের ওপর নয় বরং ফাজায়েলের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
এটা ছিল মূলত একটি প্রেরণামূলক আন্দোলন, যা শুরু হয়েছিল ক্রমান্বয়ে দ্বীন
প্রতিষ্ঠার সূচনাপর্ব হিসেবে। (দেখুন মালফুজাতে ইলিয়াস, পৃষ্ঠা ৩২ ও ৪৩)
এই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা এজন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, এই প্লাটফর্ম
থেকে দ্বীনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে না, এটা নির্ধারণ করবেন
ওলামায়ে কেরাম। এই আন্দোলনের কর্মীরা ওলামায়ে কেরামের দরবারে হাজির হবেন।
কারগুজারি শোনাবেন এবং তাদের দুআ নেবেন। কোনো দল, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান,
গোষ্ঠী ও শ্রেণি সম্পর্কে বিদ্বেষ পোষণ করবেন না। এই বিষয়টি মাওলানা
মুহাম্মদ ইউসুফ রহ. অত্যন্ত জোরালোভাবে মেনে চলার প্রতি তাগিদ দিতেন। তাঁর
কাছে ‘আমরা’ আর ‘ওরা’ এবং ‘নিজ’ ও ‘পর’ বলে কিছু ছিল না। উম্মাহর ঐক্যের
ব্যাপারে এক নিরসল দা’য়ী ছিলেন তিনি।
তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা
মাওলানা ইলিয়াস রহ. যদিও ভাতিজা হযরত মাওলানা মুহাম্মদ জাকারিয়া রহ. দ্বারা
ফাজায়েলে আমালের মতো কিতাব লিখিয়েছেন তবুও এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য এবং
ইসলামী নেজামের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘হযরত মাওলান আশরাফ আলী থানভী
অনেক বড় কাজ করেছেন। আমার মন চায় তালিম হবে তাঁর এবং তাবলিগের পদ্ধতি হবে
আমার।’ (মালফুজাতে মুহাম্মদ ইলিয়াস, পৃষ্ঠা ৪৬)
হযরত শাহ
ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ.-এর পরে চৌদ্দ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ
হলেন হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.। মাওলানা আব্দুল বারী নদভী তাঁকে
‘জামিউল মুজাদ্দিদীন’ উপাধিতে ভুষিত করেছেন। তিনি লিখেছেন, এটা একটি
ঐতিহাসিক ভুল এবং এর পেছনে অনেক বিচ্ছিন্ন কারণ আছে যে, তাবলিগ জামাত হযরত
থানভী রহ.-এর কিতাবগুলোকে তাদের নেসাব বা পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করেনি।
অথচ ফাজায়েলের প্রাথমিক প্রয়োজনের পর ইসলামের বিস্তৃত আঙিনায় ইবাদত,
লেনদেন, আখলাক, সামাজিকতা, রাজনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা এগুলো কুরআন-সুন্নাহর
আলোকে অনেক বেশি প্রয়োজনীয়।
হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর ওসিয়ত ছিল
হযরত থানভী রহ., মাওলানা ইহতিশামুল হাসান কান্ধলবী, মাওলানা মনজুর নোমানী,
মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী এবং হযরত মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ.-এর
কিতাবাদি তাবলিগের নেসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে। যদি প্রতিষ্ঠাতার নির্দেশনা
মতো কাজ হতো তাহলে তাবলিগ জামাত আজ সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তার
সীমাবদ্ধতা এবং প্রাথমিক শিক্ষার গ-িতে ঘুরপাক খেতো না। উম্মতের সব স্তরের
মানুষের জন্য এটি একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করতো। এর মধ্যেই চৌদ্দ ও পনের
হিজরি শতকের সব সংস্কার আন্দোলন একত্রিত হয়ে যেতো। কিন্তু আফসোস, অনেক
আকাক্সক্ষাই আজ মাটি!
হযরত মাওলানা আলী মিয়া নদভী রহ. ১৯৪০ সালে তাবলিগ
জামাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি শুধু উপমহাদেশেই নয় আরব বিশ্বে পর্যন্ত
তাবলিগের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেন। আরব বিশ্বে মূলত তাবলিগের পরিচিতি
তাঁর মাধ্যমেই হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নির্বিঘেœ এই কাজ করার পরিবেশ
কায়েম করতে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। তবে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে
যাওয়ার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি তাবলিগ জামাতের কাজকে যথেষ্ট মনে
করলেন না। তিনি মজলিসে মুশাওয়ারাত, পয়ামে ইনসানিয়ত এসব সংগঠন প্রতিষ্ঠা,
দ্বীনি তালিম, লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামী সাহিত্যের প্রয়োজন
জোরালোভাবে অনুভব করলেন। এই ময়দানেই নিজেকে সর্বতোভাবে সমর্পণ করেন।
জীবনভর তাবলিগ জামাতের ব্যাপারে সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.-এর এই
অভিযোগ ছিল যে, তারা দ্বীনি বইপুস্তকের প্রতি তেমন মনোযোগ দেয় না। জীবনের
শেষ দিকে তিনি তাবলিগ জামাতের বিভিন্ন জলসায় অংশগ্রহণ ও তাতে বয়ান দেয়া
থেকে বিরত থাকতেন। কারণ তিনি যেসব বিষয়ে জোর দিতেন তাবলিগের হালকা তা হজম
করতে পারতো না। তিনি হযরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ.-এর কাছে এসব বিষয়ে
অভিযোগ-অনুযোগ পেশ করতেন আর এনামুল হাসান রহ. তা মনোযোগ সহকারে শুনতেন। এ
সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা ‘কারওয়ানে জিন্দেগি’ ও অন্যান্য কিতাবে রয়েছে।
তাবলিগ জামাত হযরত মাওলানা ইউসুফ কান্ধলবী রহ.-এর যুগে সত্যিকার অর্থে
একটি বিপ্লব ছিল। তখন এর বিস্তৃতি ব্যক্তির পাশাপাশি বিষয়ের মধ্যেও হচ্ছিল।
পরে হযরত মাওলানা এনামুল হাসান কান্ধলবী রহ.-এর যুগে ভৌগোলিকভাবে ও
ব্যক্তি পর্যায়ে কাজের বিস্তৃতি ঘটেছে, যদিও ইলমি দিকটি আবদ্ধ ছিল। তবে
ওলামায়ে কেরামের মধ্যে বেশ গ্রহণযোগ্যতা ছিল এবং আমিরের বিষয়টিও বলিষ্ঠভাবে
কার্যকর ছিল। কিন্তু এরপর কাউকেই আর আমির হওয়ার মতো ‘যোগ্য’ পাওয়া যায়নি।
তখন থেকে এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে শূরার ভিত্তিতে। এতে ‘আমির’ এর
কোনো অস্তিত্ব নেই। এতে ইলমি ও চিন্তাগত দিক থেকে যদিও কোনো মতবিরোধ সৃষ্টি
হয়নি তবে ব্যবস্থাপনাগত বিষয়ে ঐক্যবদ্ধতার যে প্রাণ তা অনুপস্থিত থাকে।
আমিরের ধারা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর শুরু হলো ‘চাপিয়ে দেয়া আমিরির’ যুগ। ইলম ও
চিন্তাগত যে গভীরতা ছিল তা আর বাকি থাকেনি। কাজের পরিধি বিস্তৃতি আর
লোকসংখ্যা বাড়ার ওপর নির্ভরতা বেড়ে যায়। শুধু জামাতের নেজামের ওপর জোর দেয়া
হয়; অন্য সব কাজ, দল, সংগঠন এবং সংশোধন ও সংস্কারমূলক কাজকে অস্বীকারের
প্রবণতা শুরু হয়। ইসলামী কানুন প্রতিষ্ঠা এবং উম্মাহর প্রতি বোধের
প্রয়োজনীয়তা বেমালুম ভুলে যায়। বরং সরাসরি এসবের বিরোধিতা করতে থাকেন এর
সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। অথচ সময়টি ছিল আলেম-ওলামাকে সঙ্গে নিয়ে চলার। সমসাময়িক
বিশিষ্ট আলেমদেরকে এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য
তা হয়নি।
ইলম ও চিন্তার স্থবিরতা, সোনালী অতীত সম্পর্কে অজ্ঞতা
অথবা তা স্বীকার না করা, বিভিন্ন সময়ে সংস্কার ও সংশোধনমূলক কর্মকা- ও
কার্যকারণ সম্পর্কে উদাসীনতা, ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমির নির্বাচন না হওয়া এই
মহান কাজ ও আন্দোলনকে এমন পর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছে এখন চোখে শুধু ভাসছে
পতনের বেলাভূমি। ‘বুনিয়াদি নীতিমালা অনুসরণে ত্রুটি হলে এই জামাত একটি
ফেরকায় পরিণত হবে’ হযরত ইলিয়াস রহ. যে শঙ্কার কথা বলেছিলেন আজ মনে হচ্ছে সে
দিকেই যাচ্ছে তাবলিগ জামাত।
এই তিক্ত ইতিহাস ও রুঢ় বাস্তবতা সচক্ষে
দেখে থাকলে হযরত মুঈনুদ্দীন চিশতি, হযরত নিজামুদ্দীন আওলিয়া, হযরত
মুজাদ্দিদে সেরহিন্দি, হযরত শাহ আবদুল কুদ্দুস গাঙ্গুহী, হযরত শাহ সাবের,
হযরত আবদুল হক রুদলভী এ ধরনের আরও কত সংস্কারক ও মুজাদ্দিদের মারকাজগুলোর
দিকে একটু নজর দিন। এটা মনে করবেন না, আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনাদেরকে কোনো
‘গ্যারান্টি’ লিখে দেয়া হয়েছে। বিগত ৫০ বছর ধরে যারা এই তাবলিগ জামাতের
সঙ্গে জড়িত আছেন তাদের প্রতি করজোড়ে অনুরোধ জানাই, একসঙ্গে বসুন। দ্রুত
পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করুন। এ ধরনের একটি সম্ভাবনাময় বিশ্বব্যাপী
প্রসারিত আন্দোলনকে নির্ঘাত ক্ষতির মুখ থেকে রক্ষা করুন।
#মাহফুজুর রহমান