#_সালিশ
মহেষপুরের সমরেশের কনিষ্ঠ পুত্র গণেশ রে লইয়া উত্তরপাড়া তোলপাড়। মাসী-পিসিদের কানাঘুষা, বাচ্চা-ছেলেদের মাঝে উৎসব-উৎসব রব ও মুরুব্বি-পন্ডিতদিগের মাঝে 'পান চিবানো মুচকি হাসি' লক্ষ করা যাইতেছে। আজ সাঁজের বাদে সালিশ।
কী করিয়াছে গণেশ?
তামাকজাত অসূচি দ্রব্য সে সেবন করিয়াছে। পাড়ার যুবসমাজ কে ধ্বংসের পায়তারা করিয়াছে। পাড়ার ইজ্জতহানি করিয়াছে। অতি উত্তম শাস্তি তাহার প্রাপ্য।
মহেষপুরের সমরেশের কনিষ্ঠ পুত্র গণেশ রে লইয়া উত্তরপাড়া তোলপাড়। মাসী-পিসিদের কানাঘুষা, বাচ্চা-ছেলেদের মাঝে উৎসব-উৎসব রব ও মুরুব্বি-পন্ডিতদিগের মাঝে 'পান চিবানো মুচকি হাসি' লক্ষ করা যাইতেছে। আজ সাঁজের বাদে সালিশ।
কী করিয়াছে গণেশ?
তামাকজাত অসূচি দ্রব্য সে সেবন করিয়াছে। পাড়ার যুবসমাজ কে ধ্বংসের পায়তারা করিয়াছে। পাড়ার ইজ্জতহানি করিয়াছে। অতি উত্তম শাস্তি তাহার প্রাপ্য।
কমলাকান্ত আফিমখোর, বিবেকখোর নহে। শীতের সন্ধ্যায় গায়ে কম্বল জড়াইয়া কাঁপিতে কাঁপিতে উপস্থিত হইলুম সালিশ প্রাঙ্গনে।
সুহাস রয়, নিতাই পাল, অভিজিৎ ঠাকুর সহ সবাই উঠিয়া সৌজন্যতা করিল।
নিতাই বলিলঃ মশাই, শুনিয়াছি আপনার শরীর বিশেষ খারাপ আছে, তাই নিমন্ত্রণ জানাইয়া ধৃষ্টতা করিলাম না।
আমিঃ "তোমাদের আমন্ত্রণের ধার আমি কখনোই ধারিনাই নিতাই, না আজ তোমাদের কোনো সালিশে আমি আসিয়াছি। আমি নিজেই এক বিচার লইয়া আসিয়াছি এবং ইহাই অগ্রে করিতে হইবে।
উপস্থিত সবাই বলিতে লাগিলো, "ব্রাহ্মণ মশাই কী বলেন আগে শুনি। বাদে গনেশের বিচার করা যাইবে!"
কাঠের হাতাওয়ালা কেদারায় আমারে বসাইয়া দিল নিতাই পাল। আমি সুহাস রয় কে উদ্দেশ্য করিয়া বলিলামঃ মশাই, আপনাকে বলিতেছি।
সুহাসঃ আজ্ঞে, বলুন।
আমিঃ আপনি এলাকার কর্তা বলিয়া গেলো মাসে মহকুমার সাব-রেজিস্ট্রি অপিস থেকে দুইজন সহকারী হলফ রাইটার চাহিলো, আপনি এলান করিলেন। আমাদের গণেশ সহ এলাকার এন্ট্রান্স পাশ আরো চারিজন আর্জি করিলো আপনার নিকট। প্রত্যেকেই তাহাদের যথার্থ যোগ্যতা প্রদর্শন করিলো। আপনি সমরেশ এর পুত্র গণেশ ও বরকত মিয়ার পুত্র সেলিম এর কাছে ৮০০/- টাকা করে উপরি চাহিলেন। ৮০০/-টাকা সমরেশের পরিবারের ২ মাস চলিবার খোরাকি বয় কি! সে কী করিয়া এত টাকা প্রদান করিবে? উপরি দিতে ব্যর্থ বলিয়া গণেশ চাকুরীখানা পাইলনা, চাকরী টা পাইল নিতাই এর ভাতিজা শুভাস।
মশাই, এই ৮০০/- টাকা না নিলে তো আপনার বিশেষ কোনো ক্ষতি হইয়া যাইত না, কিন্তু সমরেশের মত দরিদ্র পরিবারে এহেন চাকুরী না পাওয়াটা অনেক। আর গনেশের মত কোমল উঠতি যুবকের নিকট এটা জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট রুপ, যা আপনি তাহাকে দেখাইলেন। আর গণেশ সমাজের এহেন অসভ্য আচরন উপলব্ধি করিয়া হতাশ হইয়া গিয়াছে এবং এই হতাশা হইতে পরিত্রাণ কল্পে এহেন কর্ম সাধন করিয়াছে।
আমি মনে করি, গনেশের এহেন অপরাধের পেছনে স্থূল কালপ্রিট আপনি। আপনি দাড়াইয়া নিজের বিচার নিজে করিয়া চলিয়া যান। ভগবান চাহেতো গনেশের বিচার আগামীকল্য করা হইবে।"
"সুহাস মহাশয়" আদবের সহিত সালিশ ছাড়িয়া চলিয়া গেল।
প্রচণ্ড শীত, ঘন কুয়াশা ভেদ করিয়া হাটিয়া বাড়ি ফিরিতেছি। বুকফাটা চাপা কান্নার একটা ভয়ংকর শব্দ আমার পেছনে পেছনে আসিতেছে।
পেছনে ফিরিয়া বলিলামঃ "কে রে তুই বাবা? গনেশ?
চিৎকার দিয়া হিংস্র আবেগ লইয়া আমারে জরাইয়া ধরিয়া কাঁদিতে লাগিলো সমরেশের মেধাবী ছেলেটা।
কাঁদ বাবা, কাঁদ!
লেখাঃ Raju Therebel
সুহাস রয়, নিতাই পাল, অভিজিৎ ঠাকুর সহ সবাই উঠিয়া সৌজন্যতা করিল।
নিতাই বলিলঃ মশাই, শুনিয়াছি আপনার শরীর বিশেষ খারাপ আছে, তাই নিমন্ত্রণ জানাইয়া ধৃষ্টতা করিলাম না।
আমিঃ "তোমাদের আমন্ত্রণের ধার আমি কখনোই ধারিনাই নিতাই, না আজ তোমাদের কোনো সালিশে আমি আসিয়াছি। আমি নিজেই এক বিচার লইয়া আসিয়াছি এবং ইহাই অগ্রে করিতে হইবে।
উপস্থিত সবাই বলিতে লাগিলো, "ব্রাহ্মণ মশাই কী বলেন আগে শুনি। বাদে গনেশের বিচার করা যাইবে!"
কাঠের হাতাওয়ালা কেদারায় আমারে বসাইয়া দিল নিতাই পাল। আমি সুহাস রয় কে উদ্দেশ্য করিয়া বলিলামঃ মশাই, আপনাকে বলিতেছি।
সুহাসঃ আজ্ঞে, বলুন।
আমিঃ আপনি এলাকার কর্তা বলিয়া গেলো মাসে মহকুমার সাব-রেজিস্ট্রি অপিস থেকে দুইজন সহকারী হলফ রাইটার চাহিলো, আপনি এলান করিলেন। আমাদের গণেশ সহ এলাকার এন্ট্রান্স পাশ আরো চারিজন আর্জি করিলো আপনার নিকট। প্রত্যেকেই তাহাদের যথার্থ যোগ্যতা প্রদর্শন করিলো। আপনি সমরেশ এর পুত্র গণেশ ও বরকত মিয়ার পুত্র সেলিম এর কাছে ৮০০/- টাকা করে উপরি চাহিলেন। ৮০০/-টাকা সমরেশের পরিবারের ২ মাস চলিবার খোরাকি বয় কি! সে কী করিয়া এত টাকা প্রদান করিবে? উপরি দিতে ব্যর্থ বলিয়া গণেশ চাকুরীখানা পাইলনা, চাকরী টা পাইল নিতাই এর ভাতিজা শুভাস।
মশাই, এই ৮০০/- টাকা না নিলে তো আপনার বিশেষ কোনো ক্ষতি হইয়া যাইত না, কিন্তু সমরেশের মত দরিদ্র পরিবারে এহেন চাকুরী না পাওয়াটা অনেক। আর গনেশের মত কোমল উঠতি যুবকের নিকট এটা জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট রুপ, যা আপনি তাহাকে দেখাইলেন। আর গণেশ সমাজের এহেন অসভ্য আচরন উপলব্ধি করিয়া হতাশ হইয়া গিয়াছে এবং এই হতাশা হইতে পরিত্রাণ কল্পে এহেন কর্ম সাধন করিয়াছে।
আমি মনে করি, গনেশের এহেন অপরাধের পেছনে স্থূল কালপ্রিট আপনি। আপনি দাড়াইয়া নিজের বিচার নিজে করিয়া চলিয়া যান। ভগবান চাহেতো গনেশের বিচার আগামীকল্য করা হইবে।"
"সুহাস মহাশয়" আদবের সহিত সালিশ ছাড়িয়া চলিয়া গেল।
প্রচণ্ড শীত, ঘন কুয়াশা ভেদ করিয়া হাটিয়া বাড়ি ফিরিতেছি। বুকফাটা চাপা কান্নার একটা ভয়ংকর শব্দ আমার পেছনে পেছনে আসিতেছে।
পেছনে ফিরিয়া বলিলামঃ "কে রে তুই বাবা? গনেশ?
চিৎকার দিয়া হিংস্র আবেগ লইয়া আমারে জরাইয়া ধরিয়া কাঁদিতে লাগিলো সমরেশের মেধাবী ছেলেটা।
কাঁদ বাবা, কাঁদ!
লেখাঃ Raju Therebel
No comments:
Post a Comment